ছেলেধরা গুজব; স্কুলে উপস্থিতি উদ্বেগজনক, পরিস্থিতি স্বাভাবিকে প্রশাসনের চেষ্টা
দেশজুড়ে ছেলেধরা গুজবের বিশ্বাস অবিশ্বাস, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর আতংক বেশ ভালোভাবেই ঠেসে ধরেছে কাউখালীর স্কুলগুলোকে। এ আতংকে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অনেকটা শংকিত। সৃষ্ঠ পরিস্থিতির কারণে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ৩০ ভাগের নীচে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন অনেক স্কুলের শিক্ষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে ভয়ভীতি দূর করা এবং পরিবেশ স্বাভাবিক করতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা জুড়ে চালানো হচ্ছে মাইকিং। পুলিশের পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে চলছে কাউন্সিলিং। ভয় কাটিয়ে উপস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরাও।
কাউখালী বিভিন্ন স্কুল ঘুরে ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসের গোড়ার দিক থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া গুজবের প্রভাব প্রথম পর্যায়ে কম থাকলেও দিন যতো গড়াতে থাকে গুজবের মাত্রাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে নিত্যনতুন গুজব আর আতংক মহামারি আকারে ধারণ করে। ফলে স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি আশংকাজনক ভাবে কমতে থাকে। যা ত্রিশ ভাগের নীচে নেমে আসে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষক-শিক্ষিরাও দিশেহারা হয়ে পড়েন।
গুজব এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে যার ফলে শিক্ষকরাও এরকম অসহায় হয়ে পড়েন। তারা উপস্থিতি ঠিক রাখতে অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করায় শেষ পর্যন্ত কোন অভিভাবক স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা চালায়। এমনকি ছেলে ধরার সাথে শিক্ষকরাও জড়িত এমন কথাও ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে পরিস্থিতি একরকম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন দফায় বৈঠক ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা কাজে লাগিয়ে গত এক সপ্তাহ যাবৎ কাউখালী থানা পুলিশ উপজেলার স্কুলগুলোতে ব্যাপক গণসংযোগ করে। প্রতিটি স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ ডেকে শিশুদের মধ্য থেকে ভয় ও অভিভাবকদের মধ্য থেকে আতংক ছাড়াতে নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্কুল ছাড়াও পুলিশ এলাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহে অভিভাবকদের ডেকে পথসভার আয়োজন করতে দেখা গেছে।
পুলিশের সচেতনতামূলক গণসংযোগ ও অভিভাবক সামাবেশের ফলও পেতে শুরু করেছে স্কুলগুলো। গত দু’দিন যাবৎ স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মাঝিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, শিক্ষকতার দীর্ঘ সময়ে এক তিক্ত অভিজ্ঞাতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এবার। পুলিশ, প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহায়তায় অবশেষে শিশু অভিভাবকদের ভয় অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে।
তারাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা সাহিদা আক্তার জানান, কি একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়ে ছিলাম। বিশ্বাস অবিশ্বাস আতংক একরমক ঠেসে ধরেছিলো। তাছাড়া ১ তারিখ থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হওয়ায় বিষয়টা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তিনি জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগীতায় পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শরু করেছে।
কাউখালী থানার ওসি মোঃ শহিদ উল্লাহ পিপিএম জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। অভিভাবক সমাবেশ ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে শিশুদের মধ্য থেকে ভয় তাড়াতে এবং স্কুলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে কেউ গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অপরিচিত ব্যক্তি চোখে পড়লে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগীতা নেয়ার জন্য তিনি সকলে প্রতি আহ্বান জানান।