parbattanews

জঙ্গি দম্পত্তি নিহতের গ্রামের বাড়ি বাইশারীতে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান: আটক ২

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানায় নিহত কামাল উদ্দিন ও জোবাইরা ইয়াসমিন দম্পত্তির গ্রামের বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আটক দুইজন হলেন, উত্তর বাইশারী গ্রামের আকবর আহমদের ছেলে মো. আলম (৪৫) ও হলুদিশিয়া গ্রামের ছৈয়দ নুরের ছেলে মো. রফিক (২৬)। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচ তৌহিদ কবির।

এদিকে চলমান অভিযানে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি ঘটনার সাথে জড়িত সত্যিকারের অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাক, তবে নিরহ ব্যক্তিরা যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেন এলাকার সুশিল সমাজ।

৬ব্যক্তির হদিস নেই অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে নিখোঁজ ৬ ব্যক্তির কোন হদিস এখনো পায়নি পরিবার ও এলাকাবাসী। তারা বিভিন্ন মামলার আসামী হওয়ায় এলাকা ছাড়া বলেও জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির ঘোষণায় নড়েচড়ে বসে অভিভাবক ও নিখোঁজ ব্যক্তিরা। এলাকার বাইরে অবস্থান করা ব্যক্তিরা নিজেরাই অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ একে একে সবাই যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ছয় ব্যক্তির কোন হদিস মিলছেনা। পাশাপাশি তারা কোথায় আছেন এবং কি করছেন সে বিষয়ে কোন তথ্য নেই বলেও জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র মো. ইউনুছ (৪০), মোস্তাক আহমদের পুত্র আমির হোছেন (৩২), ৪নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মৃত হোছনের পুত্র মো. রুবেল (২২), ৭নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা একই পরিবারের শফিক (৪৫), স্ত্রী রুবি আক্তার (৪০) ও ছেলে সালমান (১৯)।

৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু তাহের এ প্রতিবেদককে জানান, সীতাকুণ্ডে ঘটনার পর প্রাথমিক ভাবে ওই এলাকায় ৭০জন ব্যক্তি বাহরে অবস্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সংবাদের পর পর বাহিরে অবস্থানরত ব্যক্তিরা নিজ নিজ পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা শুরু করে। তবে মো. ইউনুছ ও আমির হোছনের খবর নেই দীর্ঘদিন ধরে।

ওই ছয় ব্যক্তিকে নিখোঁজ চিহ্নিত করে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আবু মুসা বলেন, এসব ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নেই বলে জানতে পেরেছি। তারা কোথায় আছেন বা কি করছেন এবং জঙ্গীবাদের জড়িয়ে পড়ছেন কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে ব্লক রেইড নামে চলা পুলিশী অভিযানের ফলে এলাকার সাধারণ মানুষদের মাঝে বিরাজ করছে নানা আতঙ্ক।

জানা গেছে ওই এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিরা অনেকে স্থায়ী বাসিন্দা নয়। তাদের অধিকাংশই মায়ানমার ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

নিহত জঙ্গি মো. কামালের পিতা মোজাফ্ফর আহমদ সাংবাদিকদের জানান, তারা রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা থেকে ১০ বছর পূর্বে যৌথখামার পাড়া এলাকায় বসতি স্থাপন করে। তার ছেলে কামাল হোসেন জঙ্গীপনায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তার কল্পনাকে হার মানিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলে জঙ্গী হয়েছে। তাই ছেলের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি এবং পরে বেওয়ারিশ হিসেবে সোমবার দাফন কার্য সম্পন্ন করে সীতাকুণ্ড পুলিশ।

জোবাইরা পিতা জানিয়েছেন, তারাও ২০ বছর পূর্বে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর থেকে এসে একই পাড়ায় বসতি তৈরি করে স্থায়ী ভাবে বাসবাস করছেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তাদের পরিবারের কোন সদস্যদের সাথে এলাকায় ঝামেলা তৈরি হয়নি। তারও প্রশ্ন কিভাবে তার ছেলে ও মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছেন এসব জগন্য কাজে। সমাজ ও রাষ্ট্রদ্রোহি এসব ছেলে-মেয়েকে দেশের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বড় ভাই জিয়াবুল হক।

জঙ্গী আস্তানায় নিহত জোবাইরা ও আটক জহিরুল, মনজিয়ারার মা জান্নাত আরা জানান, হঠাৎ কি হয়ে গেল। তিনি কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। নিজেকে জাতির কাছে বেশ লজ্জিত মনে হচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষদের কিভাবে নিজের মুখ দেখাব এ চিন্তায় ঘুম আসছে না এখন।

ঘটনার পরপরই ১৯ মার্চ (রবিবার) জঙ্গী আস্তানায় নিহতদের বাড়ি পরিদর্শনে আসেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। তিনি এসময় বলেন, বাইশারীকে জঙ্গী আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। আগের তুলনায় এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানালেন বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আবু মুসা।

অপরদিকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে ২৭ মে ২০১৪ সালে বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে অপহরণের শিকার হওয়া মাহবুবুর রহমান সেলিম ওরফে সোহেল রানা এবং তার সাথে বেড়াতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী ময়মসসিংয়ের বাসিন্দা নাফিজ হোসেনকে। কুমিল্লা ও সীতাকুণ্ডে আটক ছুরত আলম ওরফে হাসান, জহিরুল হক জসিম ও রাজিয়া সুলতানা আরজিনা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তার আসল রহস্য। ফেরিওয়ালা সেজে বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল ঘোনার পাড়ায় এলাকায় জমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করে সোহেল রানা ওরফে মাহবুবুর রহমান সেলিম।

উল্লেখ্য ২০১৬ সনের  ৩ ফেব্রুয়ারি বাইশারী বাজারে পুলিশের উপস্থিতির দেখে বোমা বিষ্ফোরণ, ১৩ মে বৌদ্ধ ভান্তে হত্যা ও ৩০ জুন এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তায় বাইশারীর দুইজন মৃত্যুর খবরের পর বাইশারীর এ হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ডে ৪ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ এবং গুলিতে ওই দম্পতিসহ চার জঙ্গির পাশাপাশি এক শিশু প্রাণ হারায়। ওই দম্পতি নিহত হওয়ার ঘটনা গনমাধ্যমে পাশাপাশি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

Exit mobile version