parbattanews

জুমফসলে ভাগ্য ফিরেছে আলীকদমের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর!

আলীকদমের পাহাড়ে একটি জুমক্ষেত

‘ঢেউ খেলানো শ্যামল পর্দায় আলো আসবে ক’দিন পর, ব্যস্ত সবাই মঞ্চ সজ্জায়, পাহাড়িকা সাজঘর!’ কবিতাংশটি জুমের ফসল তোলার মূহুর্তকে স্মরণ করে সাংবাদিক উচ্চতমনির তঞ্চঙ্গ্যার লেখা। বর্তমানে আলীকদমসহ পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের ফসল তোলার হিড়িক পড়েছে।

জুমের ফসলে ভরে উঠেছে জুমিয়াদের ঘর! পুরো ১০ একর পাহাড়জুড়ে জুম চাষ করেছেন আলীকদম বালুঝিরি এলাকার জুমিয়া দৈরাং মুরুং। ধানের সাথে সাথি ফসল হিসেবে চাষ করেছেন মারফা, চিনার, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া ও টকফল।

মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে চাষ করেছেন তিল, হলুদ এবং আদা ও মরিচ। চলতি বছর তার জুমক্ষেতে ধানের ফলন হয়েছে ভালো। তাই সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটছে দৈরাং মুরুং পরিবারের।

তিনি বলেন, পরিবার-পরিজনকে নিয়ে একবুক আশা নিয়ে জুম চাষ করেছি। আমার আশা ব্যর্থ হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে উৎপাদিত ধানে তার পরিবারের ৫ সদ্যসের আহার জুটবে সামনের দিনগুলোতে।

দৈরাং মুরুং এর মতো আরো অনেক জুমিয়া আছেন এ এলাকায়। এরাও কোন না কোন পাহাড়ে জুমচাষ করেই সারাবছরের রুটি-রুজির সংস্থান করেন।

জানা যায়, চলতি বছর আলীকদম উপজেলায় পাহাড়ি পল্লী এলাকার প্রায় ৭৮০ হেক্টর পাহাড়ে জুম চাষ হয়েছে।

আলীকদম বাজার, রেপারপাড়ি বাজার, পানবাজারসহ আশেপাশের বাজারগুলো এখন জুমক্ষেত থেকে আসা নানান ধরনের ফল-ফলাদিতে ভরপুর। পাহাড়ি ভুট্টার চাহিদা বাজারে তুঙ্গে উঠেছে। মারফা, চিনার ও চালকুমড়া স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, আগের তুলনায় আলীকদমের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। ফলে একসময় দুর্গম হিসেবে বিবেচিত কুরুকপাতা থেকেও তারা এখন গাড়িযোগে জুমের ফসল আনতে পারছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকার সময় জুমফসলের ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত থাকতেন জুমিয়ারা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, তারা সরকার ও বিভিন্ন এনজিওর সহায়তায় জুমচাষের আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ সম্পর্কে জুম চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সে সাথে সরকার সার ও উৎকৃষ্ট মানের বীজ দিয়ে সহায়তা করেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিৎ বড়ুয়া বলেন, জুম চাষীদের আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা একসময় সনাতন পদ্ধতিতে জুম চাষ করতেন। এতে ভালো ফসল উৎপাদন হতো না। তাদের কৃষি
বিভাগ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভালো ফসল উৎপাদনে সাহায্য করেছে।

Exit mobile version