parbattanews

জেএসএসকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবী

জেএসএস নিষিদ্ধের দাবীতে সোচ্চার পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও

গত বেশ কিছুদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই কিংবা টিভি সংবাদে বা ফেসবুকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দলগুলো কর্তৃক নিরীহ পাহাড়িদের উপর চালানো বর্বরতার সংবাদ দেখতে পাই।

পাহাড়ে বর্তমানে চারটি আঞ্চলিক দল আছে। সেগুলো হলো জেএসএস (সন্তু গ্রুপ), জেএসএস (সংস্কার/এমএন লারমা গ্রুপ), ইউপিডিএফ (প্রসীত গ্রুপ) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। তবে এই চার দলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমার গ্রুপ ও শান্তিচুক্তি না মানা প্রসীত বিকাশ খীসার গ্রুপই পাহাড়ে খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে নিয়মিতভাবে। বাকী দুই দলের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজির কথা খুব বেশী একটা শোনা যায় না। এর মধ্যে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক আবার সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে বলেছে তাদের কোন সশস্ত্র শাখা নেই।

জেএসএস নিষিদ্ধের দাবীতে সোচ্চার পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও

 

কিন্তু যার কাছ থেকে এই ঘোষণা অতি প্রত্যাশিত ছিলো, তিনি হলেন ‘সন্তু লারমা’ যিনি সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরের ৬০ দিনের মাথায় সকল অস্ত্র সরকারের কাছে জমা দেয়ার কথা ছিলো। অবশ্য তিনি কিছু অস্ত্র জমাও করেছিলেন সে সময়। তবে সব অস্ত্র যে তিনি জমা করেননি বরং দিন দিন আরো অস্ত্র জমিয়ে সশস্ত্র দল পরিচালনা করছেন- সেটা তিনি আবার নিজের মুখে স্বীকারও করেছেন। বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল “ইন্ডিপেনডেন্ট”-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। অস্ত্র জমা না করে এখনো সশস্ত্র দল পরিচালনা করে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তির বরখেলাপ করেছেন নয় কি?

এই সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা দেশ গঠনের হুমকিও দিয়ে থাকেন (এটা দেশদ্রোহীতার শামিল)। সেই দেশের নামও ঠিক করা- “জুম্মল্যান্ড”। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো এখন আর সন্তু লারমার “আদিম, বর্বর, একনায়কতন্ত্র ও দেশদ্রোহী” মনোভাবে বিশ্বাস করে না। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো সন্তু লারমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে করে দিন দিন সন্তু লারমা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। যার প্রমাণ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল।

জেএসএস নিষিদ্ধের দাবীতে সোচ্চার পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও

 

সেই সাথে পাহাড়ের উপজাতি যুব সমাজ এখন আর সন্তু লারমার তাঁবেদারি করার পক্ষপাতী নয়। সাপ ও মশার কামড় খেয়ে; বাবা-মা, পরিবার পরিজন ছেড়ে; রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে বনে-জংগলে লুকিয়ে থেকে ওরা আর সন্তু লারমার ভোগ বিলাসের জন্য চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি করতে আগ্রহী নয়। এই যুব সমাজ এখন পড়ালেখা করে চাকুরী করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। তারা ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, টিভি চ্যানেলসহ নানান ধরনের সুবিধাভোগ করতে পারছে। সুস্থ্য স্বাভাবিক এই জীবনযাত্রা বাদ দিয়ে ওরা আর জংগলে লুকিয়ে থাকতে চায় না।

ফলে দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সন্তু লারমা এখন ‘পাগলা কুকুরের’ মত মরিয়া হয়ে গিয়েছে। তাই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সন্তু লারমা আবারো পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সন্তু লারমার আদর্শে যারা বিশ্বাসী নয়, যারা জুম্মল্যান্ডে বিশ্বাসী নয়, যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, যারা সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এমন নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় মানুষদেরকে খুঁজে খুঁজে খুন করে একটা অরাজকতার সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে সন্তু লারমা। কিন্তু বর্ষীয়ান সন্তু লারমা হয়তো বুঝতে পারছে না যে, এতে তার জনপ্রিয়তা আরো কমছে। কারণ পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি চায় তারা সন্তু লারমার এইসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বীতশ্রদ্ধ।

সম্প্রতি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, বান্দরবানসহ পুরা পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে জনবিচ্ছিন্ন সন্তু লারমা। বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দেয়া তথ্যমতে এক বান্দরবান জেলাতেই ৬০ জনের হত্যার ছক কষেছে সন্তু লারমার জেএসএস। মূলতঃ সন্তু লারমা চায় পাহাড়ের সকল মানুষকে নিজের কুক্ষিগত করে রাখতে। এই একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের কারণেই তার দল ভেঙে বর্তমানে চারটি দলে রূপান্তরিত হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ বুঝতে পেরেছে তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সন্তু লারমা নিজে ভোগ বিলাসে মত্ত। আর পাহাড়ি ছেলেরা বনে জঙ্গলে অস্ত্র নিয়ে মশার কামড় খাচ্ছে।

জেএসএস নিষিদ্ধের দাবীতে সোচ্চার পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষও

 

বর্তমানে আসলে পাহাড়ে সন্তু লারমার কোন দাপট নেই। সে মিছেই পাহাড়ের মানুষগুলোকে ভয় দেখাচ্ছে। আসলে সত্যি কখনো চাপা থাকে না। তেমনি সন্তু লারমার স্বার্থসিদ্ধির কথাও চাপা নেই। পাহাড়ি মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে এবং সচেতন হয়েছে। সন্তু লারমার বিরুদ্ধে ঐক্যমত গঠন করেছে তারা।

পাহাড়ের প্রতিটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠ রাজনীতির চর্চা চায়। আঞ্চলিক সশস্ত্র রাজনীতির বাঁধা পেরিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলের হাত ধরে উন্নয়নের রাজনীতিতে শামিল হতে চায়। উপজাতিরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চায়। সাম্প্রদায়িক, বিভেদ ও ঘৃণাত্মক রাজনীতির বেড়া ডিঙিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে জাতীয় চেতনার মিছিলে শামিল হতে চায়। আজ উপজাতীয় জনগনের প্রতি ঘরে শিক্ষিত তরুন যুবক, প্রতি ঘরে চাকরীজীবি, বিসিএসসহ সকল চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থা, অগ্রাধিকার ব্যবস্থা, ইউরোপ-আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়ায় স্কলারশীপ পাওয়ার সুবিধা। সব মিলিয়ে পুরো পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতীয় জনগনের উন্নয়ন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত যেকোন অঞ্চল থেকে অনেক বেশি উন্নত।

অথচ শান্তিচুক্তির সুফল ভোগ করে সন্তু লারমা এককভাবে সকল রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে আসছে এবং জেএসএস এর নেতা হিসেবে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিজের খেয়াল খুশি মত চালাতে চান। আর তাইতো শান্তিচুক্তির দুই দশক পর এখনো সন্তু লারমার জেএসএস সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসের নির্মম বলি হতে হচ্ছে শান্তিপ্রিয় পাহাড়ের সাধারণ মানুষগুলোকে।

শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ হয়েও সন্তু লারমার এই সব অশান্তিমূলক কর্মকাণ্ড, শান্তিচুক্তি ভংগ, রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক কর্মকাণ্ড মোটেও গ্রহণযোগ্য ও কাম্য নয়। এর জন্য সন্তু লারমাকে দেশের আইন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিৎ। সেই সাথে, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মত উগ্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য সন্তু লারমা’র দল জেএসএসকে ‘উগ্র জংগী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবী।

Exit mobile version