জেলা পরিষদে জনসংখ্যা অনুপাতে নিয়োগের দাবি


পার্বত্য জেলা পরিষদে নিয়োগ ও শিক্ষাবৃত্তি জনসংখ্যা অনুপাতে করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) রাঙামাটি জেলা শাখা। আজ ২৩ জুন সোমবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ মারুফের কাছে এ স্মারকলিপি জমা দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান, সহ-সভাপতি এসএমজি আজম, সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মাদ ইব্রাহিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইব্রাহিম, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদা আক্তার, ছাত্র পরিষদ নেতা তাজুল ইসলাম।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে বৈষম্য দূর করে মেধার ভিত্তিতে সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ছাত্র-জনতা বিপ্লব করেছে। হাজারো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে পতন হয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার। গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ সরকার গঠনের পর পার্বত্যবাসী আশায় বুক বাঁধে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের শিকার বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পিছিয়ে থাকা কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষও তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে।
বিশেষ করে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নিয়োগ, শিক্ষা উপবৃত্তি ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে দীর্ঘ সময় ধরে চলা বৈষম্যনীতির অবসান হবে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান বৈষম্যবিরোধী চেতনাকে ধারণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নব গঠিত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে পূর্বের ন্যায় বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। যা বর্তমান সরকারের চেতনা বিরোধী এবং জাতির কাছে কোনভাবে কাম্য নয়।
২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে RHDC- ERRD-CHT, UNDP’ এর যৌথ প্রকল্পের জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ বাঙালি প্রার্থী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবাঙালি তথা উপজাতীয় নিয়োগ দিয়েছিল ৯০ শতাংশ, অবাঙালিদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল চাকমা জনগোষ্ঠির।
অন্যদিকে ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অধীনে RHDC ও ILO এর যৌথ বাস্তবায়নাধীন Progress প্রকল্পের শতভাগ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র চাকমা জনগোষ্ঠী থেকে। বাঙালিসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নিয়োগ প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
গত ১৫ জুন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ শিক্ষা বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাঙালি ৩৩.১৬ শতাংশ এবং অবাঙালি উপজাতি ৬৬.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ৫ আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশে এই ধরনের জাতিগত বৈষম্য চলতে পারে না।
জেলা পরিষদ এক তরফা নীতির মাধ্যমে বাঙালিদের অধিকার হরণ করে চলেছে। এছাড়াও নৃ-গোষ্ঠী তথা উপজাতীয়দের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে চাকমা সম্প্রদায়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খিয়াং, লুসাই, তঞ্চঙ্যা, খুমি, আসাম এর মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সুযোগ-সুবিধা সমবণ্টন হচ্ছে না।
এতে রাঙামাটি জেলায় বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি প্রান্তিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের অধীনে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী নিয়োগের জন্য গত ২০ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
এই নিয়োগেও একই ধরনের জাতিগত বৈষম্য করা হতে পারে বলে জনমনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাই এই নিয়োগ থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান বৈষম্য থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানায় পিসিএনপি।