মিয়ানমার জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ে ক্যাম্পে আতঙ্ক: আটক ৩

fec-image

বার্মিজ নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫ হাজার কয়েদীদের মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমার। তন্মমধ্যে প্রায় ৯ শ’জন রোহিঙ্গাও মুক্তি পেয়েছে বলে জানা গেছে। জেল ছাড়া পাওয়া এসব রোহিঙ্গারা চুরি করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দিক থেকে স্থল ও জলজ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মাঝেও নদী পেরিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে।

উখিয়ার বালুখালী -১১ নং ক্যাম্প থেকে ৩ জনকে ধরে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের বলিবাজার টাউন শীপের মো. তৈয়ব (৩০), আবদুর রশিদ (২৫) ও মো. ইদ্রিস (২৮) গত বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফনদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা ১১নং ক্যাম্পে এসে তাদের স্বজনদের কাছে আশ্রয় নেয়। ওই ধরনের আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা রাতের অন্ধকারে চুরি করে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এখবর প্রকাশ হলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তন্মধ্যে মো. তৈয়ব (৩০) ও আবদুর রশিদ (২৫) কে সি ব্লক থেকে উদ্ধার করে শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়ার কুতুপালংয়ের প্রত্যাবাসন ট্রানজিট ক্যাম্পের অস্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেয়। অপর জন মো. ইদ্রিস (২৮) কে শনিবার বিকেলে এ- ব্লক থেকে উদ্ধার করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর কথা নিশ্চিত করেছেন ১১,১২ ও ১৮ নং ক্যাম্পের ইনচার্জ ও সিনিয়র সহঃ সচিব মো. রাশেদুল ইসলাম।

উল্লেখ্য মিয়ানমারের বিভিন্ন জেল থেকে মুক্তি প্রাপ্ত ৮৭৬ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ৬০৯ জনকে রাখাইনের রাজধানী সিট্রুয়ে ও বাকী ২৬৭ জনকে মংডুতে গত ২০ এপ্রিল নৌবাহিনীর জাহাজে করে নিয়ে আসা হয় বলে জানা গেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে জেল মুক্তিপ্রাপ্তদের ২১ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা। ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, মংডুতে রোহিঙ্গার অবস্থান নেই বললেও চলে। তাই অনেক মুক্তিপ্রাপ্ত রোহিঙ্গারা কৌশলে চুরি করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সদ্য জেল ছাড়া পাওয়া এসব রোহিঙ্গার অধিকাংশের নিকটাত্মীয় বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্পে অবস্থান করছে। উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা স্বজনরা বিভিন্নভাবে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে যোগাযোগ করার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের এ সংকটাপন্ন সময়ে বাহির হতে যে কোন লোকজনের প্রবেশ নিয়ে সর্তক রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুতুপালং অনিবন্ধিত পুরাতন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি মো. নুর।

ক্যাম্প ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল ইউনিয়ন বা এআরএনইউ সহ সভাপতি মাস্টার নুরুল আলম বলেন, ক্যাম্প গুলোতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। ইতিমধ্যে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দেয়া চার শতাধিক রোহিঙ্গা দুই মাস পর ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যদিও তাদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

রোহিঙ্গা রিফুজি কাউন্সিলের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। কারা কোন দিক থেকে ক্যাম্পে ঢুকছে আর বের হচ্ছে তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এছাড়াও মিয়ানমারের জেল থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ নিয়ে উৎকন্ঠা বাড়ছে বলে তিনি জানান। হেলথ ও মেডিকেল সেক্টর ব্যতিত অন্য খাতের এনজিও কর্মীদের ক্যাম্পে যাতায়াত বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, মিয়ানমার, রোহিঙ্গাদের
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন