দীর্ঘ পাঁচমাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলার সবকটি পর্যটনস্পট। করোনা মহামারি আতংক থেকে পর্যটকদের রক্ষায় ২৬ মার্চ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেশের পর্যটনশিল্পের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সফলতাকে সামনে রেখে সীমিত আকারে পর্যটন কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিলে ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে উখিয়ার সাগরকন্যা ইনানী সমুদ্র সৈকত। হোটেল- মোটেল, গেস্ট হাউজগুলোতে বেড়ে যায় পর্যটকদের বিচরণ।
ব্যবসায়ীরা সরকারের এ সাধু উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিপুল পরিমাণ পর্যটক করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সীমিত আকারে পর্যটন চালু করে এ খাতকে দ্রুত পূর্বের স্থানে নিয়ে যেতে চায়।
ইনানী বিচ ঘুরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেশ কয়েকজন পর্যটকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্যটন দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়ায় বিচ এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে জিম্মি অবস্থায় দীর্ঘ ৫ মাস একঘেঁয়ে জীবনযাপন শেষে পর্যটনের পরিবেশ উপভোগ করতে পেরে পর্যটকেরাও সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ইনানী বিচের হোটেল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিচ এলাকায় তার একটি হোটেল আছে। হোটেলে ৭/৮ জন কর্মচারী বিনাবেতনে কাটিয়েছে দীর্ঘ ৫ মাস। দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধ থাকার ফলে তাকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে থাকতে হয়েছে।
সরকার সোমবার থেকে পর্যটনশিল্পকে সীমিত আকারে চালু করার নির্দেশ দিলে ইনানী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত তার হোটেল ক্যাফে রেস্টুরেন্টটি নতুন উদ্যমে চালু করার কাজ চলছে। ইনানী প্যাবেল স্টোনের ম্যানেজার সেলিমের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দীর্ঘ ৫ মাসে তার প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও তার মনে দুঃখ নেই। কারণ, প্রশাসন তার হোটেলটি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারাইন্টান হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে হোটেলটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ইনানী বিচে ঘুরতে আসা সাতকানিয়ার ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন বন্দি জীবনযাপনের অবসান ঘটিয়ে নিজেকে উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য সপরিবারে কক্সবাজার এসেছেন গত রোববার বিকেলে। পরদিন সকালে তারা ইনানীতে এসে ইনানীর খোলামেলা পরিবেশ উপভোগ করতে পেরে বেশ আনন্দিত। বললেন, এখনো পূর্ণ উদ্যমে পর্যটক আগমন ঘটেনি। তাই খুব স্বচ্ছন্দে তারা ঘুরে ফিরে আবার কক্সবাজার চলে যাবেন।
বিচে বেড়াতে আসা লোহাগাড়ার ব্যাংকার চৌধুরী আলম জানালেন, তিনি ঢাকায় একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করতেন। দেশ করোনায় আক্রান্ত হওয়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করে। দীর্ঘদিন বাড়িতে একপ্রকার বন্দি জীবন অতিবাহিত করার পর কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন ইনানী বিচে ঘুরতে এসেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার এক ছেলে সোহান ও স্ত্রী সায়মাকে।
তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, দীর্ঘ ৫ মাস পর্যটনশিল্প বন্ধ রাখায় সরকার এ খাতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হলেও অসংখ্য মানুষকে বাঁচাতে পেরেছে। বর্তমানে পর্যটনশিল্প খুলে দেওয়ায় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে সবাই।
ইনানী বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সীমিত আকারে পর্যটনশিল্প চালু করার নির্দেশ দেওয়ায় ইনানী বিচ সোমবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের পর্যটন পরিবেশ উপভোগ করতে হবে।
‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ এ বাক্য সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।