parbattanews

ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে আসছে রোহিঙ্গারা, ইউএনএইচসিআরের উদ্বেগ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে সাগর-মোহনা দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসয়ঘের হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর)। জেনেভায় শুক্রবার প্যালেস ডি নেশনস-এ এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার।

তিনি বলেন, অর্থ দিয়ে নাফ নদী পাড়ি দেয়ার সামর্থ নেই এমন অনেক রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে নদী পাড়ি দিচ্ছে। তারা যা কিছু পাচ্ছে হাতের কাছে তাই দিয়েই ভাসমান একটি ব্যবস্থা তৈরি করে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে বাঁশ, জেরিক্যান।

সেগুলো রশি দিয়ে বেঁধে প্লাস্টিক শিট দিয়ে তা ঢেকে দিচ্ছে। তার ওপর বসে আসছে রোহিঙ্গারা। গত ১০ দিনে এরকম কমপক্ষে ৩০টি ভাসমান ব্যবস্থা তৈরি করে তাতে আরোহণ করে কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে। এভাবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন ইউএনএইচসিআর।

তিনি আরো বলেন, গত ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে নৃশংস সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত নৌডুবিতে কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি আবার নতুন করে রোহিঙ্গা আসা শুরু হয়েছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায় মিয়ানমারে তাদের অবস্থা শোচনীয়। তারা তাই সৈকতে অপক্ষে করছেন বাংলাদেশে পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায়। রাখাইনে খাদ্য ও পানির সরবরাহ নেই বললেই চলে এমন রিপোর্টও পাওয়া যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। অধিক পরিমাণ সহায়তা ও সেবা দেয়ার প্রচেষ্ট থাকা সত্ত্বেও আশ্রয়শিবিরগুলোতে উপচে পড়ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীতে। তারা এখানে বসবাস করছে অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি। এমন কি এখানে সহিংসতা ও পাচারের ঝুঁকিও রয়েছে।

উইলিয়াম স্পিন্ডলার আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বাড়তি জমি, আশ্রয় শিবিরগুলোতে অধিক স্থান সংকুলান, জীবন রক্ষাকারী সেবা দেয়ার মতো অবকাঠামো প্রয়োজন। প্রয়োজন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, ল্যাট্রিন, গোসলের স্থান, বিতরণ কেন্দ্র, শিশুর সুরক্ষা, নারীদের জন্য নিরাপদ স্থান, কমিউনিটি সেন্টার। এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে লক্ষাধিক তাঁবু, প্লাস্টিক শিট, কম্বল, ঘুমানোর জন্য মাদুর, মশারি, রান্নার সেট, বালতি, জেরিকেন সরবরাহ করেছে ইউএনএইচসিআর।

ওদিকে পালিয়ে আসা নতুন এক রোহিঙ্গা বলেছেন, সেনা পোশাক পরা কিছু মানুষ এসে আমাদেরকে হমিকি দেয়। বলে আমাদের সব কিছু কেড়ে নেবে। আমার চাচা ও দাদা তাদের নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আমি ও আমার পরিবার পালিয়ে এসেছি যাতে আমাদেরকে জেলে ঢোকানো থেকে রক্ষা পাই।

এই রোহিঙ্গা পরিবারটে একটি পাহাড়ি এলাকা পাড়ি দিয়ে পৌঁছে ডংখালি চরে। এটি একটি দ্বীপ। এখান থেকে তারা বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। চলার এই পথে মিয়ানমারে একটি সেনা চেকপয়েন্টে তাদেরকে থামানো হয়। ওই ব্যক্তি বলেন, সেখানে আমাদের সব কিছুে কেড়ে নিয়েছে সেনারা। আমাদের সঙ্গে কিছুই নেই। শুধু আমাদের সঙ্গে আছে দু’একটি কাপড়। আমি বাংলাদেশে এসেছি একটু আশ্রয়ের সন্ধানে। আমি একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই।

ইউএনএইচসিআরের ওয়েবসাইটে পোস্ট করা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব মানুষ ওই ডংখালি চরে এসে পৌঁছতে পারছেন তাদেরকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। সিদ্দিক আহমেদ বলেন, তিনি ও তার ৭ সদস্যের পরিবার ওই দ্বীপে অপেক্ষায় ছিলেন ৩০ দিনের বেশি। কারণ, তাদের কাছে বোট ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আসার মতো কোনো অর্থ ছিল না। বোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বোটচালকরা এর ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ ভাড়া জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু খাদ্য ও সঙ্গে থাকা পানির সরবরাহ ফুরিয়ে আসায় সিদ্দিক ও অন্য সাতজন মিলে একটি সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেন বাঁশ ও প্লাস্টিকের জেরিকেন ব্যবহার করে একটি নৌকার মতো ভাসমান কিছু তৈরি করবেন। ঠিক তৈরি হয়ে যায় তা।

সিদ্দিক বলেন, জোয়ার শুরু হয়ে যায়। ফলে রাতেই আমরা ওই ভাসমান বস্তুটিতে করে দ্বীপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিউ যাতে তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারি। সিদ্দিকের বয়স ৩৭ বছর। তিনি স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ঠিকই বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষত হন। তার ওই ভাসমান ব্যবস্থায় ৩৪ জনকে নিয়ে আসতে পেরেছেন। এই ভাসমান বস্তুটিকে তারা চালাতে বৈঠা হিসেবে ব্যবহার করেছেন প্লেট। বাঁশের সঙ্গে প্লেট বেঁধে তা নিয়ে বেয়ে নিয়ে এসেছেন প্রায় তিন কিলোমিটার চওড়া নদী।

 

সূত্র: মানবজমিন

Exit mobile version