টানা ছুটিতে কক্সবাজারে সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক

fec-image

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর কক্সবাজারের পর্যটন খাতে করুণদশা গেছে। বন্ধ ছিল হোটেল-মোটেল জোনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দু’বেলা ভাত জোটে নি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। করোনা কেটে গেছে। মৌসুম পাল্টেছে। আসছে পর্যটক। খুলছে সম্ভাবনার দ্বার। সাগরপাড় এখন পর্যটকে ভরপুর। উপচে পড়া ভীড় আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রসমূহে। অধিকাংশ হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। সৈকত থেকে অন্তত তিন কিলো দূরের আবাসিক হোটেলেও থাকার জায়গা মিলছে না। অগ্রিম বুকিং না দেওয়ায় অনেককেই বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এই সুযোগে অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও এসেছে।

জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে সৈকতের সবকটি পয়েন্ট পর্যটকে ঠাঁসা। বিনোদন প্রেমীদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

টানা তিন দিনের ছুটিতে সৈকত শহর কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। তাদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা। এবারের ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লাখের বেশি পর্যটকের উপস্থিতি আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ৫০ কোটি টাকার বেশি বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্র ও শনিবারসহ আসন্ন বড়দিন উপলক্ষে এত পর্যটক এসেছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কোনও কক্ষ খালি নেই। এই অবস্থায় সৈকতের বালিয়াড়িতে রাতযাপন ছাড়া উপায় দেখছেন না অনেক পর্যটক। তবে সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, লাখো পর্যটক সৈকতে নেমেছেন। সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিনের টানা ছুটি পেয়ে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন পর্যটকরা। কেউ বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ, কেউ সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত। যে যার মতো আনন্দে মেতেছেন। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ি ও রামু বৌদ্ধমন্দির, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরেও।

লাবনী পয়েন্টের ঝিনুক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই শীতের মৌসুমে প্রচুর পর্যটক সমাগম ঘটেছে। মোটামুটি ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। আমরা বেশ খুশি।’

হোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। সব ধরনের হোটেল-মোটেল রুম বুকিং বন্ধ রয়েছে। হোটেলের কক্ষ পেতে লাগেজ নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় বেশ কয়েকজন পর্যটককে।

কক্সবাজার সৈকতে দায়িত্বরত লাইফগার্ড কর্মী রুবেল বলেন, ‘সৈকতে বিপুল পর্যটক সমাগমের কারণে আমাদের চাপ বেড়েছে। লাইফগার্ড থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন খুব সতর্ক। তাই সৈকতে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে।’

হোটেল দি প্রেসিডেন্ট-এর ম্যানেজার মোহাম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমাদের পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি। আজ থেকে যে টানা ছুটি ছিল সেটাতে আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি পূরণ করতে পারবো।’

জফুর আলম নামক আরেকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ট্যুরিস্ট মোটামুটি আসতেছে। ব্যবসাও হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যবসার মন্দাভাব কেটে যাবে।’

মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুকিম খান বলেন, ‘প্রায় আবাসিক হোটেল শতভাগ বুকিং। রুম খালি নাই। এই অবস্থা আরো দুদিন থাকবে।’

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘কিছু দিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এতে হতাশায় ভুগছিলেন পর্যটক ব্যবসায়ীরা। টানা তিন দিনের ছুটিতে পুরো কক্সবাজারে সব হোটেল বুকিং হয়েছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য এখনও কল দিচ্ছেন, কিন্তু আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না।’

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক জোবাইদা হোসেন বলেন, ‌‘পরীক্ষা শেষে নিরিবিলি প্রকৃতির সাথে সময় পার করতে কক্সবাজার চলে আসছি। রুম পেতে একটু কষ্ট হয়েছে। তবে সমুদ্রে এসে গোসল করতে পেরে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’

হোটেলে কক্ষ না পেলে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত কাটানোর কথা জানান ঢাকার মিরপুর থেকে সপরিবারে আসা পর্যটক পারভেজ আলম। তিনি বলেন, ‘বছরের শেষে ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময় রুম বুকিং দিইনি। এখানে এসে রুম না পেয়ে একটু কষ্ট হচ্ছে।’

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার বলেন, ‘টানা তিন দিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময় সজাগ আছি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মাসুম বিল্লাহ জানান, কক্সবাজারে বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ পর্যটক অবস্থান করছেন। তাই এসব পর্যটকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। একইভাবে সৈকতে দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

তবে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উপলক্ষে কোন প্রোগ্রাম না থাকায় ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ তেমন জমজমাট হবে না মন্তব্য পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এদিকে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথের সমস্ত জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় অনেক পর্যটক কক্সবাজার বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। হতাশায় ভুগছে জাহাজ মালিকেরা। ক্ষুব্দ ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, পর্যটক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন