টানা বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

fec-image

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গত তিনদিন এক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল গেল কয়েক বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা আরো বলেন, মিয়ানমারের ভিতরের ক্রোকোডিংগা, বড়খাল, মুরুংগা খালসহ ফকিরা বাজারের সমস্ত পাহাড়ি ঢলের পানি ঘুমধুম সীমান্তখাল দিয়ে আসার ফলে ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী মধ্যম পাড়া, কেনার পাড়া, বাজার পাড়া, হিন্দুপাড়া, পশ্চিমকূল, ক্যাম্প পাড়ার বাড়িঘর ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল বিকেলে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়নের তুমব্রু উত্তর পাড়া, ঘোনার পাড়া, উলুবনিয়া, তুমব্রু ক্যাম্প পাড়া, পরিষদ থেকে ফকিরাঘোনা, পশ্চিমকুল দুই গলাছিড়া, জলপাইতলী, ঘুমধুম মধ্যম পাড়া, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক থেকে জলপাইতলি, কচুবনিয়া, বড়ুয়া পাড়া, বড়বিল স্টেশন, ফকিরা পাড়ার পাকা রাস্তাসহ অনেক কাচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়াতে হাজারও মানুষের চলাচলে দুর্ভোগের শেষ নেই! তাছাড়া, অতি বৃষ্টিতে অনেকের কৃষি জমিতে পাহাড় ধসে এসেছে, অনেকের পুকুর ডুবে মাছ চলে গেছে।

অপরদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আসারতলী, ফুলতলী ও নাইক্ষ্যংছড়ি সোনাইছড়ি সড়কে টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে পাকা সড়ক খানা খন্দ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বাইশারী গর্জনিয়া সড়ক ও গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সোনাইছড়ি ও দৌছড়ি ইউনিয়নে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানালেন ইউপি চেয়ারম্যান।

বন্যা কবলিত ঘুমধুমের বিভিন্ন গ্রামের রেড় ক্রিসেন্ট এর পক্ষ থেকে গত ২ দিন যাবত শুকনো খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে কয়েকটি পাড়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুমব্রু বাজারে প্রায় দোকানে জলাবদ্ধতা হওয়াতে ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির সাথে বালি এসে অনেক কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঘুমধুম ইউনিয়নে অনেক পাকা রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রাম/পাড়ায় অনেকের বাড়িতে পাহাড় ধসে এসে বাড়িঘর অনেকটা ভেঙ্গে গেছে। যে, যে রাস্তায় পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ এসে যানচলাচল অনুপযোগী রয়েছে সেগুলো দ্রুত সরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান, পানিবন্দি এলাকা ঘুমধুমের বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছ। পাশাপাশি ইতিমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পানি ও কমতে শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যাছাই বাছাই করতে, ভাইস চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনকে সভাপতি করে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সরজমিনে ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি পাহাড় ধসে পড়া মাটি সরাতে মালিকপক্ষ ভয় পাই, তাহলে সশরীরে উপস্থিত থেকে ধসের ছবিসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করলে অনুমতি নিয়ে সরানোর ব্যবস্থা করে দিবেন বলেও জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন