parbattanews

টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসে মাটির নিচে ভবন, কাউখালীর পাঁচ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

কাউখালী প্রতিনিধি:

টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসে এবং পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটির কাউখালীর তিন উচ্চ বিদ্যালয় মাটির সাথে মিশে গেছে। দু’’স্কুলে পাহাড় ধ্বস না হলেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বললেই চলে। এসব স্কুল গুলোতে বর্ষা উপেক্ষা করে প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে আবার কোন কোন স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত ১৩ ও ১৪ জুন পাহাড় ধ্বসে এসব স্কুলের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন পরিদর্শন টিম বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা স্কুল গুলো দেখতে যাননি।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাহাড় ধ্বসে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অফিস রুমসহ মোট ৯টি ক্লাস রুমের একটি ভবন সম্পূর্ণ মাটির নিচে চাপা পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবান সব সার্টিফিকেট। মাটি চাপা পড়েছে প্রায় দু’হাজার পাঠ্য বইসহ দেড়শতাধিক পড়ার ব্যাঞ্চ ৩টি আলমিরা। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ভবন। বিপদজনক ভবনের সামনে সাটিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অবশিষ্ট রয়েছে একটি মাত্র কক্ষ। এতে প্রাণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ক্লাস চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। বাকী ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারনা করছেন স্কুল পরিচালনা কমিটি।

কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এত বড় বিপর্যয়ের পড়েও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেউই দেখতে আসেনি। তিনি জানান, ক্লাস চলাতে পাশ্ববর্তী মাঝিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ধার করা হয়েছে ব্যাঞ্চ। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী জানান, এভাবে চলতে থাকলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে শতভাগ। তিনি জানান, বৃষ্টির সাথে লুকোচুরি খেলে মাঠে ও স্কুলের বারান্দায় দৌঁড়ের উপর রাখতে হচ্ছে চার শতাধিক ছাত্রছাত্রীদের। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাস পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ঘাগড়া ইউনিয়নের ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮টি কক্ষর মধ্যে ৩টি সম্পুর্ণ ভেঙ্গে গেছে। পরিত্যক্ত করা হয়েছে কক্ষগুলিকে। পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে অবশিষ্ট কক্ষগুলিতে গাদাগাদি করে ক্লাস চালাতে হিসশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন ও পানি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটিতে ভরে গেছে পুরো মাঠ। পাশাপাশি থাকা ঘাগড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কাঁচা ঘরসহ সব মালামালই পানিতে ভেসে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে তাও সম্পূর্ণরুপে মাটি চাপা পড়েছে। দু’টি স্কুলের একাডেমিক ভবন অপরিহার্য হয়েপড়েছে।

ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্রা দেওয়ান জানান, বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের পর প্রায় দু’মাস পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্কুলগুলো দেখতে শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন টিম দুরে থাক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেখাও মেলেনি। তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে এর প্রভাব জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপর পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।

 

এছাড়াও কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নের হারাঙ্গীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব স্কুলগুলোর তেমন একটা ক্ষতি না হলেও সুষ্ঠভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা।

ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর বিষয়ে কথা হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজমুল হকের সাথে। তিনি জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দূর্যোগে উপজেলার তিনটি স্কুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি স্কুল। তিনি জানান, এর মধ্যে নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রায় ৭০ লক্ষ, ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৭০ লক্ষ ও ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ লক্ষ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়াও কমবেশি ক্ষতির তালিকায় রয়েছে হারাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় ও মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর তালিকা আমি তাৎক্ষনিক ভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এত বড় দূর্যোগের পর স্কুলগুলো পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় ওই মূর্হেুতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে খোঁজখবর নিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শন করেছেন বলে জানালেও সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন কেউ আসেননি আমাদের খবর নিতে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উদাসীনতা এবং সমন্বয়হীনতার বিষয়ে অসন্তোষ জানালেন খোদ  উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম চৌধুরী। তিনি জানান, এত বড় ঘটনা আমার জানাছিলনা বা কোন তালিকাও আমি পায়নি। তাছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার উচিৎ ছিল ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর একটা তালিকা আমাকে দেয়া। তিনি জানান, তালিকা দূরের কথা এতটুকু সমন্বয়ও করেননি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

Exit mobile version