ফলোআপ: পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহৃত

টেকনাফে অপহৃত তিন লাশের ঘটনায় মূলহোতাসহ আটক ৪

fec-image

টেকনাফ উপজেলার রাজারছড়া এলাকায় পাত্রী দেখতে যান কক্সবাজার চৌফলদন্ডী উত্তরপাড়ার মো. আলমের ছেলে জমির হোসেন রুবেল (৩৫) সাথে ছিলেন তার দুই বন্ধু ইমরান ও ইউসুফ। গত ২৮ এপ্রিল অস্ত্রের মুখে অপহরণের শিকার হয় তিন বন্ধু । পরদিন রুবেলের মোবাইল থেকে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী পরিবারের নিকট ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবীসহ অপহৃতদের নিযার্তনের ভিডিও প্রেরণ করে।

ঘটনাটি জানার সাথে সাথে র‌্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল ভুক্তভোগীদের উদ্ধারসহ অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত ঘটনাটি ফেইসবুক ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হলে কক্সবাজারসহ দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। র‌্যাব ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের উক্ত ফুটেজে অপহরণকারী চক্রের একজনের চেহারার সামান্য অংশ দেখতে পায়। এ প্রেক্ষিতে ভিডিও ফুটেজে দেখা ব্যক্তিকে সনাক্তকরণসহ অপহৃত ভিকটিমদের উদ্ধারের লক্ষ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্যে কক্সবাজারস্হ র‌্যাব-১৫ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি ও র‌্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের একাধিক আভিযানিক দল ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্তসহ ভুক্তভোগীদের উদ্ধারের লক্ষ্যে একাধিকবার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

গত ২৪ মে র‌্যাবের আভিযানিক দল গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে যে, উক্ত অপহরণ চক্রের মূলহোতা সৈয়দ হোসেন প্র. সোনালী ডাকাতসহ (৩৫) সহযোগীরা হাবিরছড়া দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৪ মে র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি আভিযানিক দল ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণ চক্রের মূলহোতা সোনালী ডাকাতকে গ্রেফতার করে। সে টেকনাফ নোয়াপাড়া মোচনী রোহিঙ্গা (এফডিএমএন) ক্যাম্পের ই-ব্লকের সামাদ”র ছেলে। এ সময় তার সাথে থাকা অন্যান্য সহযোগীরা কৌশলে পালিয়ে যায়।

অপহৃত ভুক্তভোগীদের আটককৃত সোনালী ডাকাত জানায়, ভুক্তভোগীদের গুলি করে হত্যা করে পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দেয় এবং লাশগুলো আগুনে পুড়ে আলামত ধ্বংস করে ফেলত। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক অপহরণকারীকে সঙ্গে নিয়ে র‌্যাবের একাধিক দল দীর্ঘ ৫ ঘন্টা দুর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে অপহরণকারী চক্রের আস্তানার সন্ধান পায় এবং আস্তনার পাশে একটি স্থানে দুইটি গলিত লাশ ও উক্ত স্থান হতে কিছুটা দূরে আরেকজনের গলিত লাশ পাওয়া যায়।

এ সময় লাশগুলো অপহৃত তিনজনের লাশ বলে জানায় আটক সোনালী ডাকাত। সে আরও জানায়, বিভিন্ন সময় অপহৃত ভুক্তভোগীদের এই আস্তানায় নিয়ে এসে নির্যাতন করা হত এবং পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপণের দাবীকৃত টাকা না পেলে হত্যা করে পাহাড়ী এলাকায় ফেলে দিত। পরবর্তীতে অপহৃত ভুক্তভোগীদের লাশ পাওয়ার বিষয়ে জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে বর্ণিত ঘটনাস্থল হতে ভুক্তভোগীদের লাশ উদ্ধার করে।

আটককৃত সোনালী ডাকাত আরও জানায়, অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অপর একজন নৌকাপথে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার জন্য টেকনাফের তুলাতলীঘাট এলাকায় অবস্থান করছে। একই তারিখ গভীর রাতে র‌্যাবের আভিযানিক দল উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এমরুল করিম প্র, ফইরকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। সে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড গোদারবিল গ্রামের মৃত আব্দুল করিম”র ছেলে।

উল্লেখ্য যে, ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের ভিডিওতে আটক এমরুল করিম প্র. ফইর এর চেহারার কিছু অংশ দেখতে পাওয়া যায়।

আটক অপরাধীরা আরও জানায় যে, তারা টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে তাদের তৈরীকৃত আস্তানায় অবস্থান করে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অপহরণকারীরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনদের অপহরণ করে তাদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যেত এবং বারংবার স্থান পরিবর্তন করে অপহৃত ব্যক্তিদের থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ব্যক্তির উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন।

এছাড়া অপহরণকারীদ্বয় অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তির নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। অপহরণ চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাবের আভিযান অব্যাহত আছে।

আটককৃতদ্বয়ের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব-১৫ (কক্সবাজার) অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

এদিকে এই ঘটনায় জড়িত দু”জনকে আটক করে টেকনাফ থানা পুলিশ। তারা হলেন, জমির হোসেন রুবেলকে গত ২৮ এপ্রিল পাত্রী দেখার কথা বলে ডেকে নিয়েছিলো এই সেই শফি আলম প্রকাশ বেলাল ও শফির সহযোগী আপন ভাগিনা নয়া পাড়া মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইয়াছিন।

তারা জানান, যাকে পাত্রী হিসেবে দেখতে নিয়েছিল তার নাম কোহিনূর। কোহিনূরের এক মামা মারা যায় বন্দুক যুদ্ধে, আরেক মামা মারা যায় চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। আত্মীয় স্বজন সবাই পলাতক। কোহিনূরের বাবা আবদুল সালাম ঘর জামাই হিসেবে পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে বসবাস করে।

ঘটনার পরপরই যখন ভুক্তভোগীদের ৩ পরিবার পৃথক পৃথক কক্সবাজার সদর থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি জিডি হয়েছে সে হিসেবে টেকনাফ মডেল থানায় আর জিডি নেয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন, টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো আবদুল হালিম।

তিনি জানান, ঘটনায় জড়িত একজনের নাম ঠিকানা যেহেতু পেয়েছে রুবেলের পরিবার, সে হিসেবে রুবেলের পরিবারকে থানায় ডেকে নিয়ে মামলা রেকর্ড করে অভিযান চালিয়ে গত ১৩ মে শফিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় টেকনাফ থানার পুলিশ।

ঐ সময় তার কাছ থেকে রুবেলের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও উদ্ধার করা হয়। কল লিস্টের সূত্র ধরে শফির সহযোগী আপন ভাগিনা নয়া পাড়া মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইয়াছিন নামের আরো একজনকে আটক করা হয়।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার না করায় লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে আদালতে রিমান্ডের আবেদনও করেন মামলার আইও। মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনারের ৪ দিন আগে অপহৃতদের বেল্ট, স্যান্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অপহৃত, আটক, টেকনাফ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন