টেকনাফে পঙ্গপাল নয় ঘাসফড়িং প্রজাতির পোকা : কীটতত্ত্ববিদ

fec-image

কক্সবাজারের টেকনাফে পঙ্গপাল সদৃশ পোকার আক্রমণে আতঙ্ক তৈরি হওয়ার পর অবশেষে পঙ্গপাল নয় বলে জানা গেছে। এগুলোকে ঘাসফড়িং প্রজাতির পোকা বলে জানিয়েছে ঢাকা থেকে আসা একদল কীটতত্ত্ববিদ।

শনিবার (২ মে) দুুুপুরে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী এলাকায় ঢাকা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমন তথ্য জানান।

প্রায় অর্ধমাস পঙ্গপাল বলে জনমনে আতঙ্ক ছিল। অবশেষে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নয় বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিনিধি দল।

জানা গেছে, পঙ্গপালের মতো ফসল খেকো পোকার সন্ধান পায় কৃষি অধিদপ্তর। দেখতে ফড়িং এর মতো এসব পোকা দল বেধে গাছের পাতা ও ডালে বসে একের পর এক পাতা খেয়ে ফেলছে। এতে উদ্বেগ ও আতংক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

দেখতে অনেকটা পঙ্গপালের মতো হাজার পোকা সাবাড় করে টেকনাফের একটি বাগানের গাছের পাতা। বাগান মালিক বিষয়টি ১৮ এপ্রিল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যাচাই করে কিটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। ওই পোকা সংগ্রহ করে জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। জেলা কৃষি কর্মকর্তা ওই পোকা ঢাকায় কৃষি অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগে গবেষণার জন্য পাঠায়।

বাগান মালিক সোহেল সিকদার জানান, তার বাড়ির আশেপাশের আমগাছ‘সহ কিছু গাছপালায় এসব পোকার দেখা মিলে। বেশ কিছু দিন ধরে আগুনের মাধ্যমে দমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এতে দমন না হওয়ায় কৃষি সংশ্লিষ্টদের পরামর্শে কিটনাশক ছিটানোর পর এসব পোকা মরে যায়। কৃষি বিভাগ থেকে কয়েকটি টিম এসে যাচাই করে। এ সময় কিটনাশক স্প্রে করা হয়। কিছু পোকাও সংগ্রহ করেন তারা।  এরই সূত্র ধরে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এসময় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. নির্মল কুমার দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কীটতত্ত্ববিদ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছি। ইতিমধ্যে পঙ্গপাল বলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায়, আমরাও সরেজমিনে দেখলাম ও পোকাটা পর্যবেক্ষণ করেছি।

তিনি জানান,  এ পোকাটি পঙ্গপাল নয়, যেটা আমরা ইতোমধ্যে জাতীয়ভাবে শনাক্ত করতে পেরেছি এটি একটি ঘাস ফড়িং জাতীয় পোকা।  এটি বিভিন্ন বনজঙ্গলে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ফসলের ক্ষতিকর পোকা। এটা নিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কোনো কারণ নেই,এটা তেমন ক্ষতি করে না। এটা অনেক আগে থেকে বাংলাদেশে রেকর্ডে ছিলো।

এ নিয়ে আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি পোকাটি অনেক আগে থেকেই পরিচিত। স্থানীয় একজন কৃষক আমাদের জানিয়েছেন, এ পোকাটি বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত। যেহেতু বার্মা থেকে এসেছে সেই জন্য এই নাম বলা হয়ে থাকে।

আসলে আমাদেরও ধারণা এটি বার্মা থেকে আসতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশেও উপস্থিতি আছে। সব দেশে ক্ষতিকারক পোকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি একটি ঘাঁসফড়িং সদৃশ পোকা।

ঢাকা খামারবাড়ি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপ-পরিচালক, আইপিএম মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই পোকাটা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং দুশ্চিন্তা আমাদের কৃষি ডিপারমেন্ট ‘সহ সারা বাংলাদেশে সবার মাঝে। ইতোমধ্যে আমরা কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের আলোচনা থেকে বুঝলাম আসলে এটা পঙ্গপাল না, এটা ঘাসফড়িং প্রজাতি। এটা একটা উপদান পোকা।

যেহেতু এখানে এ পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার এবং স্থানীয় কৃষি অফিস কাজ করছেন। তারা সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করে এটি দমন করেছে। বেশ কয়েকবার স্প্রে করার পর এখানে একটি জীবন্ত পোকাও দেখা যায়নি। পাশাপাশি আশে পাশেও এই পোকার উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

এই পোকার কোথাও অস্থিত্ব রয়েছে কিনা তা জানাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু দমন ব্যবস্থা খুব সহজ। সাইফার মেট্রিন জাতীয় বালাইনাশক স্প্রে করলে এটা দমন হয়ে যায়। চিন্তার কোন কারণ নেই, যদি বেশি পরিমাণ পোকা দেখা যায়। তখনই আমরা এই সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করলে দমন করা সম্ভব। এরপরও পোকাটির নমুনা সংগ্রহ ঢাকা গবেষণাগারে নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মনিটরিং রেখেছি, যাতে এটা ব্যাপকভাবে অন্য কোথাও আর্বিভাব না হয়।

উল্লেখ্য যে, টেকনাফের লম্বরী গ্রামের ছাত্রলীগ সোহেল সিকদারের বাড়ির আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মিলে এক ধরনের এ পোকা। পোকাগুলো গাছের পাতা সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এলে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। কৃষি বিভাগও নড়ে চড়ে বসে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন