parbattanews

টেকনাফে বড় ভাইয়ের পর এবার ছোট ভাইকে হত্যার হুমকি

টেকনাফের আলোচিত নুরুল হক ভুট্টোকে হত্যার পর এবার ছোট ভাই মো. নুরুল ইসলাম নুরুকে হত্যার নানামুখী চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

খুনের মামলার ৫ নম্বর আসামি তৌকির আহমদ ফেসবুক লাইভে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে জানান নুরুল ইসলাম নুরু।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব অভিযোগ তুলেন মো. নুরুল ইসলাম নুরু। এসময় তিনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‌গত ১৫ মে সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর হোসেনের বাড়িতে একটি সালিশি বৈঠকে যোগ দিয়ে ফেরার পথে বড় ভাই নুরুল হক ভুট্টোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচনের বিরোধকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত টেকনাফের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী একরামের নেতৃত্বে আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে আমার ভাই দৌঁড়ে গিয়ে মসজিদে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেও হামলাকারীরা চাইনিজ কুড়াল এনে মসজিদের দরজা কেটে তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে কুপিয়ে হত্যা করে।

মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ডান পা কেটে লাশ নিয়ে বিজয় উল্লাস করে চিহ্নিত খুনীচক্র।

২০২০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালদের আহ্বানে যে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের মধ্যে একরাম ছিল ২ নম্বরে। আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও বাস্তবে একরামের মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো চলছে। এলাকায় আমার ভাইয়ের পরিচ্ছন্ন ইমেজ ছিল। আমার ভাইয়ের কারণে নির্বাচনে চাচাতো ভাই বিপুল ভোটে জয়ী হয়। মূলত সেই থেকেই নুরুল হক ভুট্টোর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল একরাম ও তার বাহিনী।

নুরু বলেন, ‘এই নৃশংস ঘটনার পরের দিন ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮-১০ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এখন পর্যন্ত মাত্র ৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনার আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ইয়াবা সম্রাট একরামসহ বেশিরভাগ আসামি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

আসামিরা হলেন, একরাম প্রকাশ একরাম ডাকাত (৩৫), আব্দুর রহমান (৩৫), আব্দুর রাজ্জাক (৩৮), মোহাম্মদ রিদুয়ান (২৮), তৌকির আহমদ (৩০), নুরুল আলম (৪০), মো. সাদ্দাম (৩০), আব্দুল আমিন (৩২), হাজী ফজল আহমদ (৬৫), আলী আহম্মদ (৬০), আবু বকর প্রকাশ ভক্কো (৩০), রহীমুল্লাহ (২৮), আব্দুল খালেক (২৮), মো. আবদুল্লাহ (৪০), বশির আহমদ (৪৫), সাইফুল ইসলাম, ফয়সালসহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জন।

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত একরামের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার অপরাধে আমার ভাই ও আমার পরিবারকে চড়া মাসুল দিতে হয়েছে। একরাম ও তার অনুগত সন্ত্রাসীদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার আমরা। এই অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ও তাদের হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা জীবনের নিরাপত্তা ও আমার ভাইকে হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘খুনী ওসি প্রদীপের হাতে নিহত হয়েছে ভূট্টোর বড় ভাই নুর মোহাম্মদ। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভূক্ত এই শীর্ষ মাদককারবারী একরামের হাতে নিহত হয়েছে নূরুল হক ভূট্টো। বিগত সময়ে এই একরামের নাম বিভ্রাটের কারণে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে জনপ্রিয় কাউন্সিলর একরাম কে। এসব হত্যকাণ্ড কোন ভাবেই সহ্য করার মতো নয়। একরামের মতো অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই অবিলম্বে একরামকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।’

এ সময় নিহত ভুট্টুর মা আবেদা খাতুন, স্ত্রী নাজনীম সুলতানা, বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাইলা বেগম, ছোট ভাই নুরুল আবসার খোকন ও ভাগিনা বেলাল, নূরুল আবছারসহ স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version