টেকনাফে শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম বেপরোয়া: অপহরণের শিকার ৬ কৃষক
টেকনাফে শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক অপহরণ করেই যাচ্ছে। এই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে অভিযান পরিচালনা করলেও ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে তার নেতৃত্ব সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ৬ জন কৃষককে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। অপহরণের কিছুক্ষণ পরে চালসহ খাদ্য সামগ্রীর বিনিময়ে ৩ জনকে মুক্তি দেয়। বাকিদের নিয়ে গহীন পাহাড়ে ঢুকে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
বুধবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মিনাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সেই থেকে অদ্যাবধি পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে হোয়াইক্যং ফাঁড়ির পুলিশ।
জানা গেছে, বুধবার ( ২৯ এপ্রিল) রাতে মিনাবাজার হ্যাডম্যানের ঘোনায় ৬ জন কৃষক ধানক্ষেতে কাজ করছিল। এমন সময় সশস্ত্র একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তাদের অপহরণ করে। অপহৃতরা হলেন, কৃষক আবুল হাশেম ও তার দুই পুত্র জামাল এবং রিয়াজুদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র শাহেদ (২৫), মৌলভী আবুল কাছিমের পুত্র আকতারুল্লাহ (২৪) ও মৃত মোহাম্মদ কাশেমের পুত্র ইদ্রিস।
সেখান থেকে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর বিনিময়ে হাসেম‘সহ তার দুইপুত্রকে ছেড়ে দিলেও বাকি তিন জনকে ছেড়ে দেয়নি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহৃত শাহেদের মোবাইল থেকে তার পরিবারের নিকট ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গহীন পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখে।
একটি পাহাড়ের হাকিম ডাকাতের আস্তানার সন্ধ্যান পেলেও তাদের পাওয়া যায়নি। অপহৃতদের উদ্ধার না হওয়া ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আটক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে তার ঘোনায় (হ্যাডম্যান ঘোনায়) কৃষকরা কাজ করছিলেন। এসময় সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে।
তিনজনকে খাদ্য সামগ্রীর বিনিময়ে মুক্তি দিলেও তার আত্মীয় শাহদের মোবাইল থেকে তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হয়। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
একাধিক স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য মনে করছেন অপহরণকারীদের নেতৃত্বে কুখ্যাত হাকিম ডাকাত রয়েছে। তিনি শুধু এই অপহরণ নয়, তার আগে স্কুল শিক্ষার্থী‘সহ নানা পেশাজীবীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ নেয়। অনেককেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তাকে ধরতে ইতোমধ্যে হেলিকপ্টারযোগেও অভিযান পরিচালনা করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি হারুনর রশিদ সিকদার জানিয়েছেন, এই খবর পাওয়া মাত্র প্রশাসন‘সহ বিভিন্ন এজেন্সিকে অবগত করা হয়েছে। অপহৃতদের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক মশিউর জানান, প্রধান সড়ক থেকে ৪ কিলোমিটার পাহাড়ে ঢুকে ৬ দল করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। একটি গহীন পাহাড়ে ডাকাতদের কিছু আলামত পাওয়া গেছে। সেখানে জবাইকৃত গরুর মাংস, রান্নবান্নার উপকরণ ও মানুষ আটকানোর কিছু কৌশলী যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।