parbattanews

টেকনাফ পৌর বিএনপির ‘পকেট’ কমিটি, বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ

পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত বা কোন সতর্ক না করে হঠাৎ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বহিরাগতদের নিয়ে টেকনাফ পৌর বিএনপির পকেট কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বঞ্চিত নেতারা। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না অনুমোদন দিয়েছে মর্মে জেলা দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরীর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণার পর জানা গেছে এ খবর।

তবে পকেট কমিটিতে ত্যাগী, আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ বলেছেন পদবঞ্চিতরা। বঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করে দলে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক চর্চা ব্যাহত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ কমিটি হওয়ায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজা তাঁর ফেইসবুকে লিখেছেন “রোহিঙ্গা ও চন্দনাইশের অধিবাসী নিয়ে টেকনাফ পৌর বিএনপির কমিটি মানিনা” । এরপর বিভিন্ন তৃনমূল নেতাকর্মিরা লাইক ও কমেন্ট করেন সেই পোস্টে। অনেকেই ঘৃণা প্রকাশ করেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতি।

ঘোষিত টেকনাফ পৌর বিএনপির ‘পকেট’ কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পৌর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজাউল রহমান রেজা। শুক্রবার তিনি রাতে গণমাধ্যমকর্মীদের এ দাবি জানান। তিনি বলেন, সভাপতি রাজ্জাক মেম্বারের ছেলে ৬০ হাজার ইয়াবা নিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। ঘোষিত এ অবৈধ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতিও কারাগারে এবং তিনি একজন রোহিঙ্গা।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, সদ্য ঘোষিত পকেট কমিটির যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তার বাড়ি চন্দনাইশ সে একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার কোন সঠিক ঠিক ঠিকানা নেই। তিনি কিভাবে সাধারণ সম্পাদক হলেন ? সেটা আমার প্রশ্ন।

তিনি আরো বলেন, আমি এই মনগড়া ‘পকেট’ কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদল-যুবদল করে টেকনাফ পৌর বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। সরকারের চলমান জুলুম নির্যাতনে ক্ষমতার বাহিরে থাকায় গত নির্বাচনে পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সাময়িক অসুবিধা থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ কমিটি করা হয়েছে।

ঠিক এভাবে কমিটি মানিনা বলে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাওয়াদ বিন জাব্বার তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডি তে লিখেছেন-টেকনাফ পৌর বিএনপির কমিটি মদকুর ও মাগির দালাল নিয়ে গঠিত হয়েছে তাই আমরা সেই কমিটি মানিনা।

টেকনাফ পৌর বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা বলেন, কমিটির অধিকাংশ রোহিঙ্গা ও ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং পতিতার দালাল বাহিরের লোক দিয়ে করা হয়েছে। এবং সংগঠনের কোন নীতি অনুসরণ না করে ইচ্ছেমতো কোন সম্মেলন-কাউন্সিল না করে এ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এমনকি নতুন কমিটি দেয়ার আগে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত পর্যন্ত করা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ পৌর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, টেকনাফে আসলে টাকার বিনিময়ে কমিটি বিক্রি করতে করতে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি একজনই যথেষ্ট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আপোষহীন কারাবন্ধী খালেদা জিয়ার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য।

তারা বলেন, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের দ্বারা মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছে অনেক নেতাকর্মী। রাজনীতি করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার এলাকা ছাড়া হয়ে দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে জিবন যাপন করছেন।

পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, টেকনাফ পৌরসভায় এক সময় কমিটি করার মতো লোক ছিল না। সেখানে আমি দলের দুর্যোগ সময়ে হাল ধরেছি-করেছি অনেক সংগঠনের কাজ। ভেবেছিলাম এত ত্যাগ স্বীকার করার কারণে দল আমাকে মূল্যায়ন করবেন। এবং পৌর কমিটি হলেও দলের সংবিধান অনুযায়ী পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা হবে। সেটাও করা হয়নি। কিন্তু ৩০ আগস্ট সদ্য ঘোষিত পৌর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও রোহিঙ্গা এবং বহিরাগতদের ওই কমিটিতে বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা দু:সময়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ে কোনো ভূমিকাই রাখেননি তাদেরকে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে তথাকথিত কমিটি বাতিল করে পূর্বের কমিটি বহাল রাখার দাবি জানান।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন-যারা কমিটির ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছেন তাদের সাথে কোন নেতাকর্মীদের বর্তমান যোগাযোগ নেই। তাই দল বাঁচাতে এ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

Exit mobile version