টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে বড় বাধা নাফ নদীর ৪০০ মিটার

fec-image

টেকনাফ থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের প্রধান নৌপথ হলো নাফ নদী। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে এ নৌপথের বাংলাদেশ অংশের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারে না। ফলে এ পথটুকু যাতায়াত করতে হয় মিয়ানমারের জলসীমা হয়ে। সম্প্রতি এ জলসীমা দিয়ে যাতায়াত করা নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ানমার বাহিনী গুলি ছোড়ায় সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নাব্য সংকটে থাকা পথটুকু সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য ৪০০ মিটার এলাকা দ্রুত ড্রেজিং করা কিংবা বিকল্প রুট তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২২ সালে নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশ ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।

৯ জুন কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসনের এক সভায় সেন্ট মার্টিনের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত বেশির ভাগ কর্মকর্তা নাফ নদীর বাইরে একটি বিকল্প পথ নির্ধারণ ও জেটি নির্মাণের পক্ষে মত দেন। এজন্য দ্রুত সময়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথাও বলেন তারা।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে বাংলাদেশী ট্রলার লক্ষ্য করে সম্প্রতি মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে কয়েক দফা গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় এক সপ্তাহ ধরে এ পথে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তবে গত শুক্রবার নিত্যপণ্য নিয়ে ‘বার আউলিয়া’ নামের একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনে যায়।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে খাদ্যপণ্যের যে সংকট ছিল, সেটা প্রশাসনের উদ্যোগে আপাতত মিটেছে। তবে সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে বিকল্প পথ জরুরি হয়ে পড়েছে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘আপৎকালীন পদক্ষেপ হিসেবে কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজে করে নিত্যপণ্য ও আটকে পড়া বাসিন্দাদের সেন্ট মার্টিনে নেয়া হয়েছে। এটা দীর্ঘমেয়াদে চলবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা একাধিক বিকল্প নিয়ে ভাবছি। টেকনাফ থেকে কোন পথে সেন্ট মার্টিনে সহজে যাতায়াত করা সম্ভব, সেটি নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আপাতত কক্সবাজার থেকে দীর্ঘ রুট ব্যবহার করে সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে।’

ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘নাফ নদীতে বাংলাদেশের যে অংশটি নাব্য সংকটের কারণে নৌযান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সে অংশটি ড্রেজিং করা প্রয়োজন। কারণ বিকল্প পথে নৌযান চালানো গেলেও সেটি নিয়মিত করা খুব একটা লাভজনক হবে না। এজন্য আমরা নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশ দ্রুত ড্রেজিং করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

৯ জুন কক্সবাজারে এ সভায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার বলেন, ‘নাব্য সংকটের কারণে নৌযানগুলো কেবল নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশ ব্যবহার করে সেন্ট মার্টিন যেতে পারে না। এজন্য প্রায় ৪০০ মিটার যাতায়াত করতে হয় মিয়ানমার জলসীমা হয়ে। ফলে এ এলাকায় নৌযানগুলো মিয়ানমার বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জের মধ্যে পড়ে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারের সংকটময় পরিস্থিতির কারণে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আমরা আপাতত কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনে পণ্য পরিবহন শুরু করলেও বঙ্গোপসাগরের এ রুট দীর্ঘ। একটি কার্যকর বিকল্প খোঁজার চেষ্টা চালালেও সেটি সময়সাপেক্ষ। সাবরাং কিংবা শাহপরীর দ্বীপসহ একাধিক ঘাট ব্যবহার করে সেন্ট মার্টিনে সহজে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, নাফ নদী, সেন্টমার্টিন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন