ডজন বম ঘিরে গোয়েন্দা তৎপরতা


পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ সাঁড়াশি অভিযান চালাতে সংগঠনটির ১৩ জনকে ঘিরে একটি তালিকা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ১৩ জনকে লক্ষ্য করা হয়েছে মূলত সংগঠনটির অর্থপ্রবাহ বন্ধ করার জন্য। এই ১৩ জনের মধ্যে কয়েকজনই সশস্ত্র সংগঠনটির প্রধান নাথানা লনচেও বমের আত্মীয়স্বজন। অর্থাৎ পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে বম জনগোষ্ঠীর এই এক ডজনসহ মোট ১৩ জনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান মূল তৎপরতা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই এক ডজন বম হচ্ছে নাথানা লনচেও বম, তার তিন বড় ভাই তোয়ারলম বম, লালরৌপুই বম ও জুয়ামভাম বম, কাকা রুয়ালব্লিন বম, চাচাতো ভাই চেউসিম বম, মামাতো ভাই লালরামব্লিং বম, লালমুনঠিয়াল বম, লালথং থাং বম, জিনযুযান বম, রামময় বম ও তনলিয়ান বম। ১৩ জনের বাকি একজন হলেন ভানলালরুযাত মুরং।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে স্থানীয় নির্বাচন দপ্তরে হলফনামা দাখিল করেছিলেন নাথানা লনচেও বম। যিনি নাথান বম নামেও পরিচিত। হলফনামার সঙ্গে দাখিল করা নথিতেও তিনি এই নামগুলো উল্লেখ করেছিলেন, যারা নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবেন বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়।
নথিতে তিনি তার নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণীতে আত্মীয়স্বজন থেকে ধার বাবদ প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, কাকা রুয়ালব্লিন বম ও মামাতো ভাই লালরামব্লিং বমের কাছ থেকে পাবেন ২ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া বড় ভাই তোয়ারলম বমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা। তাদের তিনজনেরই আয়ের উৎস ‘বাগান চাষ’। তা ছাড়া আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ তিনি উল্লেখ করেছেন দুই বড় ভাই লালরৌপুই বম ও জুয়ামভাম বমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে। আর কাকাতো ভাই চেউসিম বমের কাছ থেকে নেবেন ১ লাখ টাকা। তাদের মধ্যে জুয়ামভাব বমের আয়ের উৎস ‘ইলেকট্রিক্যাল’। আর বাকি দুজনের আয়ের উৎস ‘বাগান চাষ’।
আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ধার বাবদ প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ বিষয়ে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে সুনসং পাড়ার লালমুনঠিয়াল বম ও লাইলুনপি পাড়ার ভানলালরুয়াত মুরংয়ের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা করে। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন লালথং থাং বম ২৫ হাজার টাকা এবং জিনযুযান বম, রামময় বম ও তনলিয়ান বমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে।
এ ছাড়া জেলার রুমায় নিজস্ব বাসভবন ও তার নিজস্ব শিল্পকর্ম চর্চার প্রতিষ্ঠান এবং প্রকাশিত গ্রন্থাদি বিক্রয় থেকে মোট আড়াই লাখ টাকা সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে। আবার শিল্পকর্ম (পেইন্টিং ও স্থাপত্যকর্ম) সৃষ্টি ও বিক্রয় এবং প্রকাশিত গ্রন্থাবলি বিক্রয় থেকেও ৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর এই নথিতে স্বাক্ষর করেন তিনি।
১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ছাত্রসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ঢাকা মহানগর শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সক্রিয় সদস্যও ছিলেন তিনি। খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কয়ারের পাশে সন্তু লারমার ভাস্কর্যটির অন্যতম কারিগরও তিনি। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়ের বিদ্যমান অশান্তির মূল কারণ হয়ে উঠেছেন নাথানা বম।