ডিজিটাল স্বপ্নের পথে রাঙ্গামাটির শিশুদের অভিযাত্রা

দূর পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙে এখন রাঙ্গামাটির শিশুরা শুনছে নতুন স্বপ্নের ডাক। প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছে রাঙ্গামাটি কিডস্-আফটার স্কুল প্রোগ্রাম—একটি অভিনব উদ্যোগ, যা শিশুদের গড়ে তুলছে ভবিষ্যতের ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রোগ্রামটি ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে স্পোকেন ইংলিশ, কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল ড্রয়িং ও পাবলিক স্পিকিং শেখানো হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যে ৩০০-এর বেশি শিক্ষার্থী এখান থেকে দক্ষতা অর্জন করেছে, যা পাহাড়ের শিক্ষায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। রাঙ্গামাটি বরাবরই প্রকৃতির এক মনোরম সৌন্দর্যের শহর। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে এখানকার শিশুদের প্রযুক্তি শিক্ষায় এগিয়ে নেওয়া ছিল সময়ের দাবি। শহর কিংবা গ্রামের পার্থক্য ঘুচিয়ে এই প্রোগ্রাম শিশুরা যেন নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। এই উদ্যোগ সম্পর্কে রাঙ্গামাটি কিডস্-আফটার স্কুল প্রোগ্রামের পরিচালক মো. আইয়ুব ভুঁইয়া বলেন, "আমাদের লক্ষ্য শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বাস্তব দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করা। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুরা ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।" তিনি আরও বলেন, আমরা চাই রাঙ্গামাটির প্রতিটি শিশু প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করুক এবং আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করুক। স্পোকেন ইংলিশ প্রশিক্ষক হিলসন চাকমা বলেন, "শিশুরা এখন কেবল ইংরেজি পড়ছে না, বরং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলছে। এটি তাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল অর্জন।" কম্পিউটার প্রশিক্ষক সুকর্ন চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন শুধু টাইপিং বা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড নয়, বরং প্রোগ্রামিং এবং ডিজিটাল ক্রিয়েটিভিটির দিকে ঝুঁকছে। তারা নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করে নতুন কিছু তৈরি করতে শিখছে, যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। প্রাইমারি ব্যাচের শিক্ষার্থী নুসাইবার ইসলাম বলে, "আমি কম্পিউটার দিয়ে ছবি আঁকা শিখেছি। এখন নিজেই ডিজাইন করতে পারি, যা দেখে আমার বাবা-মা খুশি হন।" সেকেন্ডারি ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফসা আক্তার বলে, "পাবলিক স্পিকিং শিখে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। আমি চাই, একদিন বড় মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে পারব।" শিক্ষার্থী অনিক ত্রিপুরা বলে, "প্রোগ্রামিং শেখার পর মনে হচ্ছে, আমি নিজেই গেম বানাতে পারব। এটি আমার জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।" শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলে, "আমার আগে ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় লাগত। এখন আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে পারি, যা আমার স্বপ্নের চাকরির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।" অভিভাবক হিমেল চাকমা বলেন, "আমার ছেলে এখানে এসে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। আগে সে মোবাইল ব্যবহার করত শুধু গেম খেলার জন্য, এখন সে নিজেই গেম বানাতে শিখছে।" অভিভাবক শারমিন আক্তার বলেন, "শুধু পড়াশোনার বই না পড়ে বাস্তব দক্ষতা অর্জন করুক, এটাই আমি চাই। আমার সন্তান এখন ডিজিটাল দক্ষতা শিখছে, যা ভবিষ্যতে তার কাজে লাগবে।" অভিভাবক তপন বড়ুয়া বলেন, "আমি নিজে ছোটবেলায় কম্পিউটার শেখার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমার সন্তান এখন সেই সুযোগ পাচ্ছে। এই প্রোগ্রাম শুধু শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলছে না, বরং একটি নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিচালক মো. আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, "আমরা চাই, এই উদ্যোগটি আরও বড় হোক। রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলাতেও যেন এটি ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুক।" স্থানীয়রা মনে করছেন, এই প্রোগ্রাম এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। শিশুরা শুধু বই মুখস্থ করার পরিবর্তে বাস্তব দক্ষতা শিখছে। এটি ভবিষ্যতে তাদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে। প্রযুক্তির নতুন যুগে রাঙ্গামাটির শিশুরা পিছিয়ে থাকবে না—এটাই এখন তাদের আত্মবিশ্বাস!
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Notice: Trying to access array offset on value of type bool in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme/ar_framework/functions_custom.php on line 255
আরও পড়ুন