parbattanews

ঢাকায় আটক ইনানীর ইয়াবা ডন হোসেন আলীর উত্থানের নানা তথ্য

উখিয়া প্রতিনিধি:

সমুদ্র ও সড়ক পথে ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের ডন ইনানীর হোসেন আলী  বিশাল ইয়াবার চালান সহ ঢাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব ২ এর একটি দল রাজধানীর হাজারী বাগ থানাধীন ১৯নং সড়কের পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজারের ১৫৩ নং বাসা হতে হোসেন আলীসহ ৪জন পাচারকারীকে গত বুধবার বিকেলে ১ লাখ ২৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহকারে আটক  করেছে।

এ সময় নগদ ৮১ হাজার টাকা ৭টি মোবাইল ফোনও জব্দ করে । গ্রেফতারের খবর শুনে ইয়াবা চালানের সেকেন্ডইন কমান্ড আপন সহোদর মোহাম্মদ আলী ও রওশন আলী আত্বগোপনে রয়েছে।

রাতারাতি কোটি পতি বনে যাওয়া ইয়াবা ডন হোসেন আলী ও তার ভাই জসিম উদ্দিনসহ সিন্ডিকেটের আরও ২ সদস্য বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ ঢাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার ঘটনা নিয়ে পুরো সমুদ্র উপকূল এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রওশন আলী গেল বছর ইয়াবার একটি বিশাল চালান নিয়ে আটক হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) আনোয়ার উজ জামান বলেন, গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলম (হোসেন আলী) ১ লাখের কম ইয়াবার চালান ঢাকায় আনেন না মিয়ানমারের ইয়াবাকারবারীর সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ। অবৈধ ব্যবসা করে কি পরিমান টাকা আয় করেছে তিনি নিজেও জানেনা। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও লেখাপড়া না জানা এ ব্যক্তির রয়েছে দেশ ব্যাপি ইয়াবার নেটওয়ার্ক। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা হল হোসেন মোহাম্মদ আলম (প্রকৃত নাম হোসেন আলী) (৪২) ছোট ভাই জসিম উদ্দিন (২৩) সালাউদ্দিন(২৭) ও মিজানুর রহমান(৩৩)। তাদের সকলের বাড়ি কক্সবাজার।

বুধবার সন্ধ্যায় স্বপ্ননীড় নামের একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে তাদেরকে ইয়াবা সহ গ্রেফতার করা হয়।   উল্লেখ্য র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কৌশলে নিজেকে কক্সবাজারের আলম বলে পরিচয় দেন। র‌্যাবের প্রেরিত ইয়াবাসহ আটকের ছবি মিডিয়ায় ভাইরাল হলে প্রকৃত পরিচয় ফাঁস হয় তিনিই  ইনানীর ইয়াবা ডন হোসেন আলী।  গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হোসেন আলী, রওশন আলী ও মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান ট্রলার যোগে ও সড়ক পথে  পাচার হয়ে আসছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  চোখ ফাঁকি দিয়ে মরণ নেশা মাদকের ব্যবসা করে রাতা রাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে এক সময়ের জীপের হেলপার এ সহোদর । বর্তমানে একাধিক ফ্ল্যাটবাড়ি  ও অসংখ্য নামি-দামি গাড়ির মালিক তারা। শুধু তাই নয় কক্সবাজার কলাতলী গেস্ট হাউজ ভাড়া নিয়ে ইয়াবা চালান ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন এ শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ইনানীস্থ মোহাম্মদ শফির বিল গ্রামের শামশুল আলমের পুত্র  হোসন আলী, রওশন আলী, মোহাম্মদ আলী ও জসিম উদ্দিন  এবং সোনার পাড়াস্থ ডেইল পাড়া গ্রামের আহমদ হোসনের পুত্র জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ইয়াবা সিন্ডিকেট পুরো উপকূলীয় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। সাগর পথ দিয়ে ট্রলার যোগে লক্ষ লক্ষ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করে আসছে। মিয়ানমার হতে সরাসরি ইয়াবা ভর্তি চালান চট্রগ্রামের হালি শহর, বন্দর টিলা, কর্নফুলীর মোহনা ও পটিয়ার মাজ্যাইয়ার টেক পয়েন্ট এবং ঢাকার সদর ঘাট খুলনা বন্দর দিয়ে খালাস করে বিশাল ইয়াবার চালান। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের সরাসরি সখ্যতা রয়েছে।

তৎমধ্যে সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য সোনার পাড়াস্থ ডেইল পাড়া গ্রামের আহমদ হোসেনের পুত্র জসিম উদ্দিন বিপুল পরিমান  ইয়াবা ট্যাবলেট সহ গত ৫ দিন পূর্বে ঢাকার এয়ার পোর্ট রোডে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত জসিম ইয়ার ব্যবসা করে দু’স্ত্রীর জন্য ২টি বহুতল ভবন নির্মান সহ গাড়ি ও বিপুল টাকার মালিক।

স্থানীয় বাসিন্দারা  জানান, মোহাম্মদ শফির বিল গ্রামের জীপের হেলপার হোসন  আলী ও মোহাম্মদ আলীর  হঠাৎ কোটি পতি খাতায় নাম চলে আসায় রীতিমত স্বপ্নে পাওয়া যেন আলা উদ্দিনের চেরাগ। জমির ব্যবসা করার কথা বলে ৩/৪  বছর পূর্বে আপন দু’সহোদর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে ছিল অনেক মাস। তার বিরুদ্ধে রয়েছে থানা ও আদালতে একাধিক প্রতারনার মামলা। বেশ কয়েকটি মামলায় হোসেন আলীর  বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়।  গত বছর মেরিন ড্রাইভ সড়কের রেজু ব্রিজ সংলগ্ন স্থাপিত বিশেষ চেকপোস্টে তিনি ইয়াবাসহ একবার  আটকও হয়েছিল। তখনই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ইয়াবা সিন্ডিকেটদের মধ্যে অন্যতম  হচ্ছে দু’ সহোদর। সমুদ্র পথে ট্রলার যোগে বিশাল ইয়াবার চালান পাচারের নেতৃত্ব দেন তারা। খুব কম সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায় সহোদর গং। নিজ গ্রাম মোহাম্মদ শফির বিল ও কক্সবাজার শহরে বহুতল ভবন নির্মান করেছে। এমনকি নামি-দামী গাড়িও  রয়েছে একাধিক। কলাতলী হোটেল মোটেল জোনে শামিম গেস্ট হাউজ নামক পুরো ভবনটি ২ কোটি টাকা নগদ জামানত দিয়ে এবং প্রতি বছরে ২৫ লক্ষ ভাড়ায় দুই বছরের জন্য লীজ নিয়েছেন এ ইয়াবা সিন্ডিকেট

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ইয়াবা সহ আটক হয়ে অনেকদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে এসে হোসেন আলী  শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত হয়। বলতে গেলে সমুদ্র ও সড়ক পথে বড় বড় ইয়াবার চালান তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত। ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী গেস্ট হাউজে বসে ব্যবসার লেনদেন করে আর ছোট ভাই জসিম উদ্দিন ঢাকায় অবস্থান করে ইয়াবার মজুদ রাখে। অনেকের অভিযোগ কিছু অসৎ পুলিশের সহযোগিতায় তারা পূরোদমে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।

Exit mobile version