ঢামেকে চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউন, ভোগান্তিতে রোগীরা

fec-image

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও নিরাপত্তার দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগসহ সব ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারগুলোও বন্ধ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে হাসপাতালে আসা এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতাল থেকে সকালে আমার চাচাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। আসার পরে শুনি চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন এখানে চিকিৎসা না পেয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে চিকিৎসা পাব কি না জানি না।

কুমিল্লা থেকে আট বছরের এক শিশুকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা স্বজন বলেন, সকালে দেয়াল চাপা পড়ে আমার নাতি আহত হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে শুনি এখানে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। তার অবস্থা ভালো না, গাড়িতে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছি। হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে দাঁড়িয়ে আছি, জানি না আমার নাতিকে বাঁচাতে পারব কি না।

এর আগে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন শনিবার থেকে ঢামেকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমাদের তিনজন চিকিৎসককে নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে মারতে মারতে প্রশাসনিক ব্লকের পরিচালকের রুমে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বহিরাগতরা এসে হাসপাতালে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপর ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক) এসে ভাঙচুর চালায়। এরকম ঘটনা যদি প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? রোগীদের কীভাবে চিকিৎসা সেবা দেব। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। যেখানে আমাদের নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা কীভাবে চিকিৎসা দেব।

গতকাল শনিবার নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসি টিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

ওইদিন মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য আরেক গ্রুপ চাপাটিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ।

পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অনস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা।

নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন