তিন পার্বত্য জেলায় হরতাল প্রত্যাহারে প্রশাসনের প্রবল চাপ: অনড় বাঙালী নেতৃবৃন্দ
পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
বিতর্কিত ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন বাতিলের দাবীতে ৫ পার্বত্য বাঙালী সংগঠনের ডাকা হরতালের প্রথম দিনেই হরতাল প্রত্যাহার করতে বাঙালীদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে সরকার। রবিবার হরতালের প্রথমদিনে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালী নেতৃবৃন্দকে ডেকে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বিনিময়ে তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সাথে বৈঠক করিয়ে দেয়ার প্রস্তাবও দেন।
কিন্তু বাঙালী নেতৃবৃন্দ সরকারী এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে হরতাল চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেয়। এদিকে চাপ দিয়ে হরতাল প্রত্যাহার করাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আন্দোলন নস্যাৎ করতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে হরতাল আহ্বানকারীরা। কোনো ষড়যন্ত্র ও চাপের মুখে আন্দোলন থামনো যাবেনা বলে তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
হরতাল আহ্বানকারী অন্যতম সংগঠন সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির পার্বত্য নিউজকে বলেন, বরিবার হরতালের প্রথম দিনেই তিন পার্বত্য জেলায় সমঅধিকারের নেতৃবৃন্দকে বৈঠকের আহ্বান জানায় স্থানীয় প্রশাসন। সরকারের পক্ষে ডিসি, এসপি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কমকর্তারা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটিতে দুপুরে সমঅধিকার আন্দোলনের সভাপতি মশিউল আলম হুমায়ন, কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কামাল, হাজী মোঃ ইউনুস কমিশনারের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়। কর্মকর্তাগণ বাঙালী নেতৃবৃন্দকে হরতাল প্রত্যাহারে চাপ সৃষ্টি করে আগামী ১১ জুন মঙ্গলবার রাঙামাটিতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের সাথে সমঅধিকার আন্দোলনের বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন। পরিবর্তে বাঙালী নেতৃবৃন্দ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।একই সাথে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
মনির জানান, খাগড়াছড়ি জেলা সমঅধিকার আন্দোলনের সভাপতি এম আনোয়ার উল্ল্যাহর সাথে বৈঠক করেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তারা সমঅধিকার নেতাকে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ করলে তিনি এটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তার একার পক্ষে এখানে কিছু করার নেই বলে জানান। সমঅধিকার নেতা বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে প্রসাশনের সহায়তা চান।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জমির উদ্দিন জানান, রবিবার বিকালে হরতাল প্রত্যাহার ইস্যুতে জেলা প্রশাসনের সাথে বাঙালী সংগঠনগুলোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হল রুমে বৈঠক হয়। বাঙালীদের ৫টি সংগঠনের ৭২ ঘণ্টা ডাকা সোম ও মঙ্গলবারের হরতাল জনস্বার্থে ও ১১জুন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা এইচটি ইমামের আগমন উপলক্ষে প্রত্যাহারর অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসকের অনুরোধ প্রত্যাখান করেন বাঙালি নেতারা।
নেতারা এসময় বলেন, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সংশোধনী সংসদে পাশ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিছিন্ন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পাহাড়ীরা জুমল্যান্ড করে বাঙ্গালীদের ভিটেমাটি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করবে। নেতারা বলেন, পাহাড়ী বাঙালি সমন্বয়ে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন ও কমিশনে সমান সংখ্যক বাঙ্গালী প্রতিনিধি অন্তরভূক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবী জানান।
সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, ডিজিএফআই কমাণ্ডার মেজর অমিত হাসান, এনএসআই কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাঙালি সংগঠনগুলোর পক্ষে নেতৃত্বদেন সমঅধিকার আন্দোলন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমেদ চৌধুরী, বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতি ফারুখসহ নেতৃত্বদেন।
বাঙালী নেতৃবৃন্দ সরকারকে পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধিত আইনটি বাতিলের দাবী জানান অন্যথায় হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচী পালনের হুশিয়ার উচ্চারণ করেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছাড়া হরতাল প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলেও জানান নেতৃবৃন্দ। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
হরতাল প্রত্যাহার বিষয়ে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি ইঞ্জিয়ার আলকাস আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার বাঙালীদের অস্তিত্বের আন্দোলনকে বিএনপি জামায়াত ইস্যু তুলে নস্যাৎ করতে চাইছে। এই মুহুর্তে যারা হরতালের বিরোধিতা করবে তারা বেঈমান বাঙালী হিসাবে চিহ্নিত থাকবে।
মামুন বলেন, আসলে এটি পার্বত্য সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার ষড়যন্ত্র। তার চাপেই স্থানীয় প্রশাসন এমন আচরণ করছে।তিনি বলেন, এই আইন পাশ হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী থাকতে পারবেনা। আর বাঙালী না থাকলে সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনও থাকতে পারবেনা।বিষয়টি প্রমাসনকে ভেবে দেখতে বলি।
ইঞ্জিনিয়ার মামুন বলেন, এই ভূমি কমিশন অবৈধ। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির বিরোধ দেশের প্রচলিত আইনেই হতে হবে। সরকার একদিকে আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়িরো বাঙালীদের হুমকি দিচ্ছে পাহাড় ছাড়ার। কাজেই কোনোভাবেই হরতাল প্রত্যাহার করা হবেনা। বরং আগামীতে লাগাতার হরতালের সাথে সাথে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালীদের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতি অনাস্থা জানাতে এমন কর্মসূচী নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এঘটনায় সমঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির টেলিফোনে পার্বত্য নিউজকে বলেন, হরতাল প্রত্যাহার ও আলোচনার প্রস্তাব সরকারের একটি চাল। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমরা আন্দোলন স্থগিত করলেই সরকারও আলোচনা থেকে সড়ে পড়বে। এটি পার্বত্য বাঙালীর জীবন মরণের প্রশ্ন। সরকার ভূমি কমিশন আইন সংশোধনীর নামে যা করেছে তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো বাঙালী থাকতে পারবেনা।
এমন একটি অবস্থায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক ছাড়া আমরা কোনোভাবেই হরতাল প্রত্যাহার করবোনা। বরং ৭২ ঘণ্টা হরতালের পর আগামীতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতালের কর্মসূচী আসছে বলে জানান। সমঅধিকারের এই নেতা বাঙালীদের এই আন্দোলনে ফাটল ধরাতে সরকার দালাল সৃষ্টি করছে। এইসব দালালদের বিষয়ে পার্বত্য বাঙালীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান।