তিন বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

fec-image

রোহিঙ্গা সংকটের এখনও দৃশ্যমান সমাধান না হলেও তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থা। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে জাতিসংঘ ৯২ কোটি ডলার সহায়তা চাইলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬০ শতাংশ তহবিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। এবছর দেশটির দেওয়া সহায়তার পরিমাণ ২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এমনকি গত তিন বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য জোগাড় করা মোট তহবিলেরও সিংহভাগের জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যার পরিমাণ ৬৭ কোটি ডলারের বেশি।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো নির্মম নির্যাতন শুরু হলে ওই বছরের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়। প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়ের সন্ধানে আসা এসব ভিনদেশি মানুষকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে রাজি হয় সরকার।

এর ফলে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আগে থেকেই আরও প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় শিবির স্থাপন করে এই সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে বসবাসের সুযোগ দিয়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আর তাদের মানবিক অন্যান্য সহায়তা।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকেই তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বছরজুড়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য ৯৫ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছিল জাতিসংঘ। এর প্রায় ৭০ শতাংশ দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা। রোহিঙ্গাদের সে বছর প্রত্যর্পণ সম্ভব না হওয়ায় ২০১৯ সালেও একইভাবে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থার কাছে সহায়তা চায় বিশ্বজনীন সংস্থাটি। এবছর চাওয়া মোট সহায়তার পরিমাণ ৯২ কোটি ডলার। জাতিসংঘের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, এখন পর্যন্ত এর প্রায় ৬০ শতাংশ তহবিল জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে।

তবে গত তিন বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য জোগাড় করা মোট তহবিলের সিংহভাগের জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ ৬৭ কোটি ডলারের বেশি। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহায়তার পরিমাণ এখন পর্যন্ত ২৭৪ মিলিয়ন ডলার (২৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ হাজার ২৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি)। এ সহায়তা অন্য সব দেশের দেওয়া মোট সহায়তার প্রায় সমান।

এ বছর রোহিঙ্গাদের দেওয়া সহায়তার পরিমাণ

ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য দিয়েছে ১২০ মিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ৩৪ মিলিয়ন ডলার, ইউরোপীয় কমিশন থেকে এসেছে ৩১ মিলিয়ন ডলার, জাপানের কাছ থেকে এসেছে ৩১ মিলিয়ন ডলার, কানাডা পাঠিয়েছে ২৩ মিলিয়ন ডলার, কাতারের থানি ফাউন্ডেশনের সহায়তা এসেছে ২২ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি পাঠিয়েছে ১৭ মিলিয়ন ডলার, সৌদি আরবের সহায়তা ১০ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত দিয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার, নিউজিল্যান্ডের রোহিঙ্গা সহায়তা ৪.৫ মিলিয়ন ডলার, নরওয়ের সহায়তা ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তুরস্ক পাঠিয়েছে ৪ মিলিয়ন ডলার, সুইজারল্যান্ড দিয়েছে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, সুইডেনের সহায়তা ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সহায়তা ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, ফ্রান্সের সহায়তা এক দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার, আয়ারল্যান্ডের সহায়তা এক দশমিক এক মিলিয়ন ডলার, ফিনল্যান্ডের সহায়তা এক মিলিয়ন ডলার এবং বৃহৎ দেশ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার সহায়তা এক মিলিয়ন ডলার।

সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে যুক্তরাষ্ট্র, এমন প্রত্যাশাও রয়েছে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত যে কোনও ধরনের সহযোগিতাকে স্বাগত জানাই।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে আমরা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালের জন্য যৌথ রেসপন্স পরিকল্পনা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেটি পর্যালোচনা করবো এবং আগামী অর্থবছরের জন্য তহবিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবো।’

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘এটি খুশির বিষয় তারা আমাদের সহায়তা দিচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা আরও দেবে, এটা আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমর্থন অব্যাহত থাকলে এই সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল হক বলেন, ‘মানবিক সহায়তার পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে এই সমস্যার আরও দ্রুত সমাধান হবে।’

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের জেনারেলরা যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত ভয় পায়। কয়েকজন জেনারেলের ওপর তারা ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু এর পরিধি বাড়লে আরও ভালো হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন