ত্রিপুরাতে ইউপিডিএফের সশস্ত্র ক্যাম্প
ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র ক্যাম্প রয়েছে বলে দাবী করেছে ত্রিপুরার আদিবাসী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির শীর্ষস্থানীয় সংস্থা-কাউন্সিল অফ টিপ্রসা হোদা। এ নিয়ে গত ২৮ জুলাই হিন্দুস্থান টাইমসে একটি রিপোর্ট করেন সাংবাদিক প্রিয়াংকা দেব বর্মণ। পার্বত্যনিউজের পাঠকদের জন্য রিপোর্টটি প্রকাশ করা হলো:
আগরতলা, ভারত: ত্রিপুরার আদিবাসী সংগঠন দাবি করেছে বাংলাদেশী সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা বাদের রাজ্যে অবস্থান করছে। তারা দাবি করেছে যে, রাজ্যের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ধলাই জেলার নারিকেলকুঞ্জে বাংলাদেশী সশস্ত্র গ্রুপের কয়েকটি ক্যাম্পে সশস্ত্র দলকে পাহারা দিতে দেখেছেন এবং তারা তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কর্মী বলে সন্দেহ করেছে।
ত্রিপুরার আদিবাসী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির একটি শীর্ষস্থানীয় সংস্থা-কাউন্সিল অফ টিপ্রসা হোদা-অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র ক্যাম্প রয়েছে তাদের রাজ্যে এবং তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে কাউন্সিল জানিয়েছে, ত্রিপুরা রাজ্যের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র ধলাই জেলার নারিকেলকুঞ্জে কিছু সন্ত্রাসী দলকে কয়েকটি ক্যাম্পে সশস্ত্র পাহারা দিতে দেখেছে এবং তারা তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) কর্মী বলে সন্দেহ করে।
ইউপিডিএফ, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল যা ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর গঠনের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন লাভ করা।
ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই উপজেলায় চাকমা অনুপ্রবেশকারী স্যাটেলারদের ব্যাপারে তদন্ত করে বের করে বহিস্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পত্র লেখার একদিন পর তারা এই অভিযোগ করলো।
চিঠিতে তারা আরও দাবি করেছেন যে চাকমা জনগণ ধলাই জেলার নারিকেলকুঞ্জা, নাইকাচেরা, টুইচাকমা এবং ঠাকুরচেরা সহ কিছু জায়গায় বসতি স্থাপন করেছে, বাংলাদেশ থেকে আসার পরে ভারত-বাংলা আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে তাদের বসতি সম্প্রসারিত করেছে।
টিপ্রসা হোদার সংগঠনের আহ্বায়ক ধীরেন্দ্র ত্রিপুরা গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা চাকমা জনগণের অবৈধ অভিবাসন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখেছি কারণ আমরা বাংলাদেশ থেকে তাদের অবৈধভাবে ভারতে আসার রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি। তারা অবৈধভাবে তৈরি ভারতীয় নথিও পেয়েছে।”
চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (সিএনসিআই) অভিযোগগুলিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তাদের দাবি, ত্রিপুরা রাজ্যের রাজকীয় ইতিহাস অনুযায়ী চাকমারা ত্রিপুরার আদিবাসী।
সিএনসিআই এর সহ -সভাপতি অনিরুদ্ধ চাকমা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য এই অভিযোগ করা হচ্ছে।”
বিরোধী দলীয় নেতা মানিক সরকার বলেন, টিপ্রাসা হোডা উত্থাপিত বিষয়টি উদ্বেগজনক এবং তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকে চিঠি পাঠিয়েছেন কারণ সিপিএম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে কোনো ধরনের ব্যাঘাতের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন,“আমরা সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই। আমরা সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি বিঘ্নিত করার যেকোন ষড়যন্ত্রের বিরোধিতা করব”।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এখনও টিপ্রসা হোদার অভিযোগের জবাব দেয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব আস্তানা ধ্বংস করার জন্য আহ্বান জানান। সম্মেলন শেষে দুই বাহিনীর মহাপরিচালকের যৌথ প্রেস বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।