থানচি সীমান্তে শতাধিক পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ

fec-image

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও থানচি উপজেলা প্রশাসন যৌথ আয়োজনের দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তরে ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে থানচি উপজেলা খাদ্য সংকটে বাঁশ কোড়ল খেয়ে বেঁচে থাকা ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১০০ পরিবারের জন্য জরুরী খাদ্য সামগ্রী প্রেরণ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারে চাল ২০ কেজি, ডাল ২ কেজি, তেল ২ লিটার, লবণ ২ কেজি করে থানচি বাজার নদীর ঘাট হতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে।

এছাড়া ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ম্রো ছাত্র সংগঠন, লামা উপজেলা উগ্যথোয়াই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতি পরিবারের জন্য ৩০ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ৫ লিটার তেল, ৫ কেজি নাপি, ৫ কেজি লবণসহ অসুস্থদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পানির বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সাধারণ জ্বর, পেট ব্যাথাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ মামুন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

উপজেলা প্রশাসনসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমূহের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার, পাড়ার প্রধান কারবারি, বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শেষে রেমাক্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা দুর্গম বুলু ম্রো পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে প্রায় শতাধিক পরিবারের গত বছরে আবাহওয়া অনুকূলে না থাকায় জুমের ধান ভালো ফলন হয়নি। ফলে চলতি বছরে বর্ষা শুরুতে জুমের ধান পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত পরিচর্চা কাজে ব্যস্ত থাকার সময় ওই সব পরিবারের মাঝে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। দুর্গম ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের কর্তব্যরত জনপ্রতিনিধিরা সময় মতো জানতে পারিনি। আমরা হঠাৎ করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি সুতরাং জানার পর আমরা প্রশাসনকে অবহিত করা হলে এ ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

যোগাযোগ করা হলে মেনহাত ম্রো কারবারি ও বুলু ম্রো কারবারি বলেন, আমরা জুমের অপরিপক্ক ধানকে পরিপক্ক করার জন্য পরিবারের সকলে নিয়ে জুমের পরিচর্চা কাজের ব্যস্ত ছিলাম হঠাৎ করে থানচি উপজেলার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মংবোওয়াংচিং মারমা অনুপম আমাদের গ্রামে পৌঁছলে তাকে অবহিত করি। তিনি চলে যাওয়ার একদিন পর চেয়ারম্যান মেম্বার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা আমাদের সহায়তা দিতে আসে। এখন আমরা বাঁশ কোড়ল বদলে পরিশুদ্ধ ভাত খেতে পারছি। যে পরিমান পেয়েছে জুমের ধান পরিপক্কর হওয়ার পর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, গত ২৬ তারিখে “খাদ্যাভাবে বাঁশ কোড়ল খেয়ে শতাধিক পরিবারে জীবনযাপন” “খাবারের অভাবে কাঁদছে বান্দরবানের দুর্গম কয়েকটি পাড়ার শিশুরা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নজরে আনে।

থানচিতে দুর্গম এলাকাগুলো নেটওর্য়াক না থাকার আমরা সব খবর ও পায়নি। তারপর ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এবং সঙ্গে সঙ্গে আমি জনপ্রতিনিধি সাথে যোগাযোগ করে খাদ্য সামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিধান্ত নিয়েছি, উপজেলা প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের আমলে কেউ না খেয়ে থাকবে না। সীমান্তে সকল পরিবারকে আসন্ন জুমের ধান কাটার পর্যন্ত তাদের খাদ্য এবং শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ তাদের নাগরিক সেবা দিতে সর্বদায় প্রস্তুত। তবে আপাতত অসহায় পরিবারগুলোতে আসন্ন জুমের ধান কাটার পর্যন্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন