দশ বছর পর বাঘাইহাটে পাহাড়ি বাঙালির মিলন মেলা

fec-image

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী বাঘাইহাট বাজারটি দীর্ঘ ১০ বছর পর চালু হয়েই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে, স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালির সরব উপস্থিতিতে এ যেন এক অন্যরকম মিলন মেলা। দূর দুরান্ত থেকে হাজারো ব্যাবসায়ী এসেছে হাটে, ফলে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে পুরনো রূপে ফিরেছে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটি। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে চেনা রূপ ফিরে পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যাবসায়ী প্রতিনিধিরা।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) সাপ্তাহিক হাট বার থাকায় এই বাজার পরিদর্শনে আসেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের রিজিয়ন কমাণ্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ ফয়জুর রহমান। এ সময় বাঘাইহাট জোন কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ হুমায়ুন কবির, সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা (নয়ন) , বঙ্গলতলী ইউপি চেয়ারম্যান জ্ঞানো জোতি চাকমা, বাজার কমিটির সভাপতি ডাঃ মোঃ নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জুয়েলসহ স্থানীয় হেডম্যান কারবারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ ফয়জুর রহমান সকাল ৯টার দিকে বাঘাইহাট বাজার পরিদর্শনে আসলে বাজার পরিচালনা কমিটির নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে বাজারের প্রতিটি গলি, ভাসমান দোকান পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন।

এ সময় রিজিয়ন কমান্ডার বলেন অতীতের ন্যায় কোন ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, স্থানীয়দের পাশে সবসময় সেনাবাহিনী ছিল থাকবে, কোন অপশক্তি যেন কোনরূপ বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেনাবাহিনী সবসময় পাশে থাকবে। অবশেষে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানান।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৬০ সালে চালু হয় বাঘাইহাট বাজারটি। সে সময় এ বাজারে শুধু পাহাড়ে উৎপাদিত সবজির হাট বসতো না, বসতো পাহাড়ি বাঙালির মিলন মেলাও। কিন্তু ২০১০ সালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঘাইহাটের পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সৃষ্টি হয় সহিংস পরিস্থিতিও। এ সহিংস ঘটনার জন্য বাঘাইহাট এলাকার স্থানীয়রা একে অপরকে দায়ী করেন। এরপর স্থানীয় প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যায় বাঘাইহাট বাজারটি চালু করার। কিন্তু বাজার বসানোর বিরুদ্ধে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিরোধ থাকে চরম। তাই দীর্ঘ বছরেও চালু করা যায়নি বাজারটি। অবশেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে অবসান হয় এ বিরোধের। চলে একের পর এক আলোচনা-পর্যালোচনা। আস্থা ফিরতে থাকে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে। অবশেষে গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার আলোচনা সভার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার সমাধান করে রবিবার হাটের দিন ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে বাঘাইহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল জানান, দীর্ঘ দিনের সমস্যা অবশেষে সমাধান হয়েছে। রবিবার হাটের দিন বাজারে পাহাড়ি বাঙ্গালীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এহেন সম্প্রীতির এক সেতুবন্ধন, এমন সরব উপস্থিতি পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে আবারও সম্প্রীতি সুবাতাস বইছে। আস্থা ফিরেছে একে উপরের মধ্যে, তাই আমরা উভয় সম্প্রদায়ের লোক আশা করছি আমাদের এই সম্প্রীতি অটুট থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন