parbattanews

দিনে দিনে পার্বত্য উপজাতীয়রা এলিট বাঙালীরা নিঃস্ব শ্রেণিতে পরিণত হচ্ছে

মো: সাইফুল ইসলাম:

 পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজাতীয়দের সকল প্রকার লেনদেন আয়কর মুক্ত। পার্বত্য এলাকায় যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ দু’লক্ষ টাকার মধ্যে সেগুলোর ঠিকাদারী সম্পূর্ণরূপে উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত। দু’লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের ১০% উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৯০% ঠিকাদারির সিংহভাগ উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপজাতীয়রাই দখল করে নেয়। কারণ তাদের আয়কর দিতে হয় না বলে তারা বাঙালিদের চাইতে কম দরে কাজ করার সুযোগ পায়। উপজাতীয়রা ব্যাংক ঋণ নিলে তাদের সুদ দিতে হয় শতকরা মাত্র ৫ টাকা। আর বাঙালিদের সুদ দিতে হয় সারা দেশবাসীর মতই শতকরা ১৬ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। সরকারিভাবে গৃহীত এ ধরনের ভ্রান্তনীতির কারণে পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালিরা উপজাতীয়দের তুলনায় প্রতিনিয়তই পিছিয়ে পড়ছে।

দিনে দিনে উপজাতীয়রা এলিট শ্রেণিতে পরিণত হচ্ছে আর অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে হতে বাঙালিরা আজ অবহেলিত এবং উপজাতীয়দের অনুগত শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে। সরকারিভাবে এ ধরনের জাতিগত বৈষম্য তৈরি কখনোই কাম্য হতে পাওে না। আর এমন বৈষম্য নীতি কোন অঞ্চলের শান্তির জন্যও সহায়ক নয়। তাই এসব বৈষম্যের অবসান করে পার্বত্যাঞ্চলে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করার সময় এখনই।

চুক্তি পূর্ব বিশৃঙ্খল অবস্থায় যেসব উপজাতীয় নাগরিক ভারতে আশ্রয় গ্রহণকরেছিল তাদেরকে ফিরিয়ে এনে ২০দফা প্যাকেজ সুযোগ সুবিধা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এভাবে ৬০ হাজারেরও বেশি উপজাতীয় জনগণ বর্তমানে পুনর্বাসিত হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।
অন্যদিকে ১৯৮৬ সাল থেকে ২৮ হাজারের বেশি বাঙালি পরিবারকে অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে গুচ্ছ গ্রামে এনে কার্যত বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে। গুচ্ছ গ্রামগুলোতে পরিবার প্রতি একটি মাত্র ঘর তোলার জায়গা আর মাসিক ৮৬ কেজি চাল অথবা গম তাদের একমাত্র অবলম্বন। ২৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এসব গুচ্ছ গ্রামের এক একটি পরিবার ভেঙ্গে বর্তমানে ২টি, ৩টি বা তার চেয়েও বেশি পরিবারে বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি তাদের ঘর তোলার জায়গা, মাসিক রেশনের পরিমাণও বাড়ানো হয়নি। তাছাড়া গুচ্ছ গ্রামগুলোতে সেনিটেশন ব্যবস্থাও নেই। নেই ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য স্কুল কলেজ। চাষাবাদের জমিও তাদের নেই। ফলে তারা একমাত্র মাসিক ৮৬ কেজি রেশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে কোনো রকমে জীবন ধারণ করছে। মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ছেলের বউ, মেয়ের জামাই, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলসহ একই ঘরে গাদাগাঁদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছে গুচ্ছ গ্রামবাসী বাঙালি পরিবারগুলো। অথচ তাদের কবুলিয়ত ভুক্ত জমি-জমাগুলো দুস্কৃতিকারী উপজাতীয়রা দখল করছে নানা কৌশলে। কখনও বাঙালিদের জমিতে রাতারাতি কেয়াং নির্মাণ করে আবার কখনও চাষ করে দখল করছে বাঙালিদের জমি। সব কিছু দেখেও আমাদের সরকার এবং প্রশাসন নির্বিকার। তাদের যেন কিছুই করার নেই।
বাঙালিরা গুচ্ছগ্রামে আবদ্ধ হয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করতে থাকবে এটাই যেন স্বাভাবিক। কিন্তু এ অমানবিক অবস্থা দীর্ঘ দিন চলতে পারে না। আর চললেও সরকার এবং উপজাতি কারো জন্যই তা মঙ্গলজনক হবে না। তা ছাড়া রেশন বাবদ প্রতিমাসে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব বিবেচনা করে গুচ্ছগ্রামবাসী বাঙালিদেরকে তাদের কবুলিয়তভুক্ত জমিতে পুনর্বাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
পার্বত্য চুক্তির ভূমিকার সাথে এর ধারা উপধারা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক অবস্থার মধ্যে সাংঘর্ষিক আরও অনেক বিষয় রয়েছে। আর এসব কিছুর ফলেই পার্বত্য চুক্তিকে শুরু থেকে সচেতন দেশবাসী মেনে নিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও মেনে নেয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে গত ১৭ বছরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সরকার চুক্তির বিতর্কিত ধারা উপধারাগুলি নতুনভাবে বিবেচনা করতে পারে। এতে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয় সারা দেশই উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।
Exit mobile version