parbattanews

দীঘিনালায় পাহাড়ি নারী হত্যা, ঘাতক আটক

নিজস্ব প্রতিনিধি, দীঘিনালা:

দীঘিনালায় এক পাহাড়ি নারীকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দীঘিনালা উপজেলার মধ্যবোয়ালখালী এলাকায় এঘটনা ঘটে।

নিহত ওই নারীর নাম ইন্দ্রা চাকমা(৫৫)। সে মৃত সুরুতি চাকমার স্ত্রী। এঘটনায় ঘাতক আলাউদদীনকে(৬৫)আটক করেছে গ্রামবাসী বাঙ্গালীরা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(জেএসএস-এমএন লারমা) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে বর্গাচাষী আলাউদ্দীনের জমিতে ধান কেটে নেয়ার পর ঘাস খাওয়াতে গরু বাঁধে ইন্দ্রা চাকমা। গরু বাঁধাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার একপর্যায়ে ইন্দ্রা চাকমার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় আলাউ্দ্দীন। পরে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ইন্দ্রা চাকমা।

ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই আলাউদ্দীন বাড়ি চলে যায়। এক পর্যায়ে ঘটনাটি জানাজানি হলে, গ্রামের বাঙ্গালীরা তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

ইন্দ্রা চাকমার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে রুণা চাকমা (২২) এর বিয়ে দিয়েছেন, মেজ ছেলে রুনেল চাকমা (১৯) অটোরিক্সা চালান, এবং ছোট ছেলে মুনেল চাকমা দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ এবং ছোট মেয়ে মেরিনা চাকমা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।

ঘটনার খবর পেয়ে ছোট মেয়ে মেরিনা চাকমা বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন।

এব্যাপারে বড় মেয়ে রুনা চাকমা(২২) জানান, গত ১২ বছর আগে বাবা মারা গেছেন। সংসারের অভিভাবক বলতে মা’ই আছেন। এখন মা’কেসহ খুন করা হলো। এখন সংসারে ভাইবোনদের দেখাশুনা করার মতো আর কেউ রইলনা।

এব্যাপারে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রতিবেশী মানসী চাকমা (২২) জানান, গরু বাঁধার পর আমরা দূর থেকে দুইজনকে ঝগড়া করতে দেখেছি। একপর্যায়ে হঠাৎ করেই বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়।

১নম্বর মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ইন্দ্রা চাকমাকে হত্যার পর আলাউদ্দীন স্বাভাবিকভাব্ইে বাড়ি চলে আসে। আমরা খবর পেয়ে তার বাড়ি গিয়ে দেখি, সে তার ঘরে বসে আছে। পরে ছুরিটা দিয়ে দিতে বলি। ছুরি দিয়ে দিলে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি।

দীঘিনালা থানায় আটক আলাউদ্দীন ইন্দ্রা চাকমার হত্যার ঘটনা স্বীকার করে জানান, সে আমার শত্রু ছিল। তাই শত্রুকে হত্যা করেছি।

দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সামসুদ্দিন ভুইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আসামী আটক রয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে এবং ঘাতক আলা উদ্দীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(জেএসএস-এমএনলারমা) পক্ষ।

বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলার লারমা স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে থানা বাজার উপজেলা কমপ্লেক্স প্রদক্ষিণ করে, দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ চত্ত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে, উপজেলা জেএসএস এর সদস্য মনিলাল তালুকদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা জেএসএস এর সদস্য সমীর চাকমা, উপজেলা যুব সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক নলেজ চাকমা জ্ঞান, উপজেলা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাজ্যময় চাকমা, দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি জেনিথ চাকমা এবং যুব সমিতির সদস্য সুমন চাকমা প্রমূখ।

সভায় ইন্দ্রা চাকমায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আলাউদ্দীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এদিকে ঘটনার পর ইন্দ্রা চাকমার সৎকার্য ও দাহক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যে বড় ছেলে রুনেল চাকমার হাতে খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার পক্ষ হতে দশ হাজার, দীঘিনালা জোনের পক্ষ হতে দশ হাজার এবং ১নম্বর মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে দশ হাজার’সহ ত্রিশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এছাড়া ইন্দ্রা চাকমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে মুনেল চাকমা এবং স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মেরিনা চাকমা’র পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া দায়িত্ব নিয়েছে দীঘিনালা জোনের সেনাবাহিনী।

এসময় দীঘিানলা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর সাব্বির আহম্দ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ কাশেম ঘটনাস্থলে নিহতের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

Exit mobile version