ধর্মকে কাজে লাগাচ্ছেন ট্রাম্প

fec-image

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছেন এমন দাবি করে সম্প্রতি মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে একটি পোস্ট করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের প্রসঙ্গও টেনে আনেন।

পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘তিনি ক্ষমতায় থাকলে কখনোই এমনটি ঘটতো না। কমালা হ্যারিস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমেরিকা ও সারা বিশ্বের হিন্দুদের উপেক্ষা করেছেন। ইসরায়েল থেকে ইউক্রেন, আমাদের দক্ষিণ সীমান্তসহ সব জায়গায় তাদের অবস্থা যা-তা। কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব।’

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হিন্দু জনগোষ্ঠী এবং ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েও এই পোস্টে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি লিখেছেন, ‘উগ্র বামপন্থিদের ধর্ম বিদ্বেষ থেকে আমরা আমেরিকান হিন্দুদের রক্ষা করব। আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব। এছাড়া (নির্বাচিত হলে) আমার প্রশাসনের মাধ্যমে ভারত এবং ভালো বন্ধু নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ব।’ সবশেষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা অজানা নয়। এর আগেরবার ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদি সমর্থন করেছিলেন। এখন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে ট্রাম্প সেই বন্ধুত্বকেই কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টম কিন। তিনি বলেন, মোদির ‘কর্তৃত্ববাদী ধরনের জন্য’ ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে কিছুটা পছন্দ করেন এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকান হিন্দুদের ভোট পাওয়ার জন্য এটি হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাচনী প্রচারণার অংশ।

ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই ভালো। সেইসঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই খুব ভালো থাকে।

তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দীবাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর মানে হিন্দু ভোটারদের ভোট পেতেই এটা করেছেন তিনি। কিন্তু আমেরিকাতে তো একটা বিশাল সংখ্যক আওয়ামী লীগ সমর্থকও রয়েছেন। তারাও ট্রাম্পের এই স্টেটমেন্ট পছন্দ করবেন। কারণ আওয়ামী লীগ সমসময় মনে করে, তারা হিন্দুদের পক্ষে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবিরও মনে করেন যে নির্বাচন সামনে রেখেই এমনটা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ট্রাম্প আসলে বাংলাদেশকে নিয়ে চিন্তিত না। বাংলাদেশ নিয়ে তার যে খুব মনোযোগ আছে, তাও না। আমার ধারণা, নির্বাচনী ফলাফলকে তার পক্ষে নেওয়ার জন্যই এটি করেছেন। যাদের ভোট পেলে তার লাভ হয়, সেই গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এদিকে মার্কিন নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর মধ্যে এক্স-এ ডনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টে আবারও বাংলাদেশ নিয়ে তার ভাবনার চিত্র ফুটে উঠেছে বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, বিশেষ করে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে হিলারী ক্লিনটনসহ ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্ক রয়েছে। এর বিপরীতে ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছে ভারত এবং মোদির সম্পর্ক। আর এসব নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ।

আবার কেউ কেউ মনে করছেন, হিন্দু ভোট টানার জন্যই ট্রাম্প অনেকটা নাটকীয়ভাবে এক্স-এ ওই পোস্ট দিয়েছেন। তার ভয় হচ্ছে, বেশিরভাগ হিন্দু ভোট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমালা হ্যারিসের পক্ষে চলে যেতে পারে। কোনো ভাষ্যকার অবশ্য বলছেন, এর পেছনে লবিস্ট ফার্মসহ পতিতদের হাত থাকলেও থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, ধারণা করা হচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও হিন্দু ভোটারদের ভোট টানতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ তুলে পোস্ট করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর ভারত অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের এই অভিযোগকে সমর্থনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ট্রাম্পের পোস্টে। এছাড়াও ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয় লাভ করলে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নীতি কী হবে তা অনেকটাই ধারণা করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন