parbattanews

ধর্মীয় বৈপরিত্বের কারণে খুব সহজেই হারিয়ে যাচ্ছে খ্রীস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি ও বর্ণিল সংস্কৃতি

bangladesh-christian-girls-resized

পাহাড়ে খ্রীস্টান সম্প্রসারণবাদ মিশন-২

এম.এ.হোসাইন, খাগড়াছড়ি:
পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রীস্টানদের মধ্যে কার্যক্রম চলছে ব্যাপ্টিস্ট, ইভানজেলিক, আমেরিকান ক্যাথলিক, অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাথলিক, রোমান ক্যাথলিক ও ক্যাথলিকদের। খ্রীস্টধর্মীয় ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের মিশনারী থাকলেও তাদের সকলের কাজ ও উদ্দেশ্য একইরকম। খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণকারীদের মিশনারীগুলোর মাধ্যমে প্রথমে দুই বছর মেয়াদী ধর্ম প্রচার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় মিশনারীগুলোতে, এরপর মাসিক বেতন ধার্য করে নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয় ধর্ম প্রচারের জন্য। পাশাপাশি পরিবারের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া হয় গ্রামবাসীদের। খাগড়াছড়িতে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কার্যালয়ে গসফেল ফর এশিয়ার অর্থায়নে চলছে এই কার্যক্রম। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্তপাড়া গায়ে রয়েছে তাদের নানাবিধ কার্যক্রম।

সঠিক নেতৃত্ব সংকট, রাজনৈতিক বিভ্রান্তি, দারিদ্রতা আর স্বাবলম্বীতার লোভে  নিজেদের ঐতিহ্য, বর্ণিল সংস্কৃতি আর ধর্মকে বর্জন করছে পার্বত্য উপজাতীয়রা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও বিদেশী চক্রের মদদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিনাশি এই নিরব কার্যক্রম চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে গড়ে উঠা খ্রীষ্টান মিশনারীগুলোর মাধ্যমে। সহজশর্তে ঋণ, ছাত্র ও যুবাদের বিনা খরচে আবাসিক সুযোগ সুবিধায় বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি প্রশিক্ষণ, বৃত্তি, চাকুরী আর স্বাবলম্বী হওয়ার নিশ্চয়তার প্রলোভনের কাররণই খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। পাশাপাশি এই ধর্মের অনুসারীদের সানুগ্রহে প্রতিদিন ধাবিত হচ্ছে তাদের নিকট প্রতিবেশীরাও। জীবন জীবিকায় সাবলম্বী হলেও স্বকীয় সংস্কৃতি যে বিলুপ্তির পথে চলেছে তা অনুধাবন করার সক্ষমতা নেই এদের অনেকেরই।  তিন পার্বত্য জেলার জেলা শহরসহ বিভিন্ন অজপাড়া গায়ে দীর্ঘদিন ধরে নীরবে চলছে খ্রীস্টান সম্প্রসারণবাদের এই কার্যক্রম।

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ খাগড়াছড়ি সদর শাখার সাবেক সভাপতি সুখেন্দু বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ধর্মীয় আচার আচরণে ব্যাপক বৈপরিত্বের কারণে খুব সহজেই হারিয়ে যাচ্ছে খ্রীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি ও বর্ণিল সংস্কৃতি। তিনি বলেন, যারা খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে তারা এখন সনাতন ধর্ম অনুসারী ত্রিপুরাদের কাছ থেকে অনেক দুরে। খ্রীষ্টিয় মতানুসারেই চলছে তাদের জীবন জীবিকা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বকীয় পরিচয়, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষার নামে একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগ্রাম করলেও নিজ ঘরে সংস্কৃতির মরণঘাতক খ্রীস্টান সম্প্রসারণবাদের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধে তাদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি এখনো।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৫৭সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি থেকে খ্রীস্টান ধর্ম সম্প্রসারণবাদের কাজ শুরু হয়। বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে ত্রিপুরা, খুমি, বোম, খিয়াং ম্রো, পাংখোয়া, কুকী, লুসাই, খুমীসহ ছোট ছোট সম্প্রদায়ের অধিকাংশরাই ছিলেন প্রকৃতি পুজারী। বর্তমানে বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পঞ্চাশ শতাংশই খ্রীষ্টান ধর্মের অনুসারী। বান্দরবান জেলার মোট জনসংখ্যা পৌনে পাঁচ লাখের মধ্যে এক লাখই এখন খ্রীস্ট ধর্মাবলম্বী। এ জেলায় খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে তিন শতাধিকের উপরে। রয়েছে তাদের মতবাদের পরিচালিত পাক প্রাইমারী থেকে হাই স্কুল লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। নানাবিধ সুযোগ সুবিধা আর অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে ওরা এখন খ্রীষ্টান ধর্মকে সময়োপযোগী ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছে।

Exit mobile version