ধলিয়াখালে বিলীন প্রবাসীর স্বপ্ন, ঝুঁকিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
“নদীর এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে এইতো নদীর খেলা, সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধা বেলা” দুটি চরণের বাস্তব রূপ পরিলক্ষিত হলো খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায়।
সম্প্রতি ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের খড়স্রোতের তাণ্ডবে বিলিন হয়ে গেছে প্রবাসী শাহাজাহানের স্বপ্ন। মা মাটি দেশের ও পরিবার পরিজনের মায়া ছেড়ে টানা এক যুগেরও বেশি সময় প্রবাস জীবনের আয় দিয়ে মাটিরাঙ্গার ধলীয়া খালের তীরবর্তী মোহন্ত চৌধুরীপাড়া এলাকায় ১০ শতক জমি কিনেন তিনি। ২ বছর পূর্বে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেন বহুতল ভবন। স্বপ্নের প্রাসাদে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন শাহজান। কিন্তু বিধিবাম। বেশি দিন সইলনা তার সুখ। সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কড়াল শ্রোতে পাড় ভাঙ্গনে মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১২ বছরের লালিত স্বপ্নের বহুতল বাড়ি।
সরেজমিনে, গিয়ে দেখা যায়, শাহজানের বসত বাড়ির প্রায় ৩৫ ফিট নদী ভাঙ্গনে একটি ভবনের ৫টি কক্ষ সম্পূর্ণভাবে ধসে ধলিয়া খালে বিলীন হয়ে গিয়েছে। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ি অর্ধেক ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অপরদিকে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাটিরাঙ্গা দারুছুন্নাহ মাদ্রাসা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এক দিকে পাহাড় ধস, অপরদিকে ধলিয়া খালের ভাঙ্গনে যেকোন সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এতে আবাসিক ও অনাবাসিক ৪৭৫ জন শিক্ষার্থীর জীবন ও শিক্ষা উভয় ঝুঁকিতে রয়েছে
একই সাথে খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কে খালের উপর নির্মিত মাটিরাঙ্গা ব্রিজ রয়েরছ চরম ঝুঁকিতে। ভাঙ্গন ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে, নদী প্রবাহ শাসনের আওতায় আনা না হলে দুই এক বছর পর ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এছাড়াও খালের তীরবর্তী এলাকায় প্রায় বিশটির বেশি পরিবার নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে জীবন যাপন করছে।
ধলিয়াখাল তীরবর্তী এলাকা ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী শাহজাহন বলেন, তার সারা জীবনের শ্রম ও লালিত স্বপ্নের বাড়ি চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে ঘরে থাকা যাবতীয় মালামাল সহ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাকি যে টুকু আছে তাও যে কোন সময় গ্রাস করতে পারে ধলিয়া খাল। তার মত যেন অন্যকারো আবাস ভূমি ভেঙ্গে না যায় সে জন্য ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
মাটিরাঙ্গা দারুছুন্নাহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসাইন জানান, ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অনেক জায়গা খালে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। পাহাড় ধসে একটি শ্রেণীকক্ষ মাটির চাপা পড়েছে। উভয় কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কোন সময় ঘটতে পারে আরও বড় ধরণের দুর্ঘটনা। পাহাড় ধস ও নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট্যদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি পৌরসভার আওতায় পড়ে। পৌর প্রশাসনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।