নতুন জোটে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশও

নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনা এগিয়েছে ইসলামাবাদ ও বেইজিং

fec-image

নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশ। সম্ভাব্য জোটটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাছাড়া আজ সোমবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনেও এমন বন্তব্য করা হয়েছে।

জোট গঠনের সঙ্গে যুক্ত এক কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জোট গঠন নিয়ে ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। কারণ, উভয় পক্ষই নিশ্চিত যে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়িয়ে আঞ্চলিক সংহতির জন্য নতুন একটি জোট সময়ের দাবি।

সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ছিল এ উদ্যোগেরই একটি অংশ। এটি দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে প্রথম বৈঠক, যা ভারতের নজরে আসে এবং কিছু উদ্বেগও তৈরি করে। মূলত জুনের ১৯ তারিখে হওয়া ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল সার্কের সদস্য দেশগুলোকে নতুন এই জোটে আমন্ত্রণ জানানো।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিউবিউন জানিয়েছে, ভারতকে নতুন প্রস্তাবিত এই জোটে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে দিল্লি এতে ইতিবাচক সাড়া দেবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ভারতের আঞ্চলিক নীতি ও স্বার্থ অন্য দেশের চেয়ে আলাদা।

তবে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নতুন এই গোষ্ঠীর অংশ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য নতুন এই জোট বা সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো বর্ধিত বাণিজ্য ও সংযোগের মাধ্যমে বৃহত্তর আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা অর্জন করা। সার্ককে এক সময় দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ বলা হতো। কিন্তু এটি কার্যত পাকিস্তান-ভারতের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ সার্ক সম্মেলন হয়েছিল ১০ বছর আগে। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও ভারত সেটা বয়কট করে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সরকারও সেসময় ভারতপন্থি হওয়ায় ঢাকা সেই সময় সেই সম্মেলনে অংশ নেয়নি।

এরপর সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যদিও পাকিস্তান সম্মেলন আয়োজন করতে বেশ আগ্রহী ছিল। সম্প্রতি পেহেলগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের জন্য সার্কের বিশেষ ভিসা সুবিধাও বাতিল করে দেয়, যা সার্কের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তোলে।

এমন অবস্থায় পাকিস্তান ও চীন কয়েক মাস ধরে নতুন সংস্থা বা জোট গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিল এবং উভয় দেশই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, উন্নত ভবিষ্যতের জন্য একই মনোভাবসম্পন্ন দেশগুলোর একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানো উচিত।

মূলত বাণিজ্য, যোগাযোগ ও আঞ্চলিক সংযুক্তি বাড়ানোই হবে নতুন জোটের মূল লক্ষ্য। এছাড়া মতাদর্শগতভাবে মিল আছে; এমন দেশগুলোকে একত্রিত করেই গঠন করা হবে এই নতুন সংস্থা।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারত সাম্প্রতিক সময়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) দিকেও খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বশেষ দুটি এসসিও সম্মেলনে অংশ নেননি। চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশ এসসিও-তে রয়েছে।

এছাড়া অনেকেই এই জোটকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেন। তবে ভারতের নীতিগত পার্থক্য ও পশ্চিমঘেঁষা অবস্থান এসসিও-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেই অনেকের মত।
বিকল্প এ জোট গঠন উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে পাকিস্তান, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আজ সোমবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও চীন বর্তমানে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠনের পরিকল্পনায় একসঙ্গে কাজ করছে, যা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন