নাইক্ষ্যংছড়িতে অবৈধ ইটভাটা সাবাড় করে চলছে পাহাড় ও বন

01

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন, জনবসতি এলাকার বাইরে সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কয়লা পুড়িয়ে ইটভাটায় ইট তৈরির নিয়ম থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে প্রায় পাচঁ একর জায়গা জুড়ে ‘এ-বি’ নামে একটি ইটভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে ভিন্নভাবে। ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় দুই কি. মি. দূরে বৃহত্তর রেজু ফাত্রাঝিরি ৮নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত বনায়ন এলাকার কাছাকাছি মাটি কেটে সেখানে তৈরি করা হয় কাঁচা ইট এবং তা পাকা করা হয় ওই বনেরই গাছ পুড়িয়ে। এ রকম অনিয়ম সত্ত্বেও ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই ইটভাটায় এখনো যাননি। ইটভাটাটির মালিক কক্সবাজারের উখিয়ার নুরুল হক কোম্পানি বলে জানা গেছে।

উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের সামনের সড়ক দিয়ে ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দুই কি. মি. এগোলেই রাস্তার পূর্ব পার্শে বনের ভিতর নজরে আসে ‘এ-বি’ ইট ভাটার কাচা চারটি ড্রাম চুল্লি। পাশের ওই সবুজ বনের বুকে আছড়ে পড়েছে ইটভাটার কালো ধোঁয়া। বনাঞ্চল লাগোয়া ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু মগপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটে গত দুই বছর স্থাপন করা হয়েছে ভাটাটি।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ভাটার চতুর পাশে বনায়ন, জনবসতী গ্রাম ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দিব্যি ইটভাটা চলছে। গত বছরও এই ইটভাটার সব কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় বন থেকে। চলতি মৌসুমে ৩০ লাখ ইট তৈরির টার্গেটে নেমেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। কাঁচা ইট তৈরির মাটি নেওয়া হচ্ছে ইটভাটা লাগোয়া বিশাল আকৃতির পাহাড় থেকেই। স্থানীয় রেজু বনবিট কর্মকর্তার যোগসাজোসে ইট পোড়ানোর জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে আশপাশের বনে। তবে ইটভাটা দেখার দায়িত্ব বন বিভাগের নয় বলে বিষয়টি উড়িয়ে দেন রেজু বিট কর্মকর্তা মো. ছৈয়দ আলম। সে কারনে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধে নবাগত জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবু কান্তি চাকমা জানান, বিভিন্ন ভাবে পরিবেশ ধ্বংসের কারনে এলাকার জনসাধারণ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এখনো এলাকায় বহাল তবিয়তে পাহাড়ী পাথর উত্তোলন ও ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।

সরেজমিনে ইটভাটায় নিয়োজিত মাটি কাটা একাধিক শ্রমিক জানান, মালিকের নির্দেশে প্রতিদিন বনের পাশের পাহাড় থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন তারা। বনের গাছ কেটে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য রয়েছে আরেকটি দল। জানতে চাইলে ভাটার ম্যানেজার আমান উল্লাহ মুঠোফোনে এ প্রতিবেদক কে বলেন, সবার সাথে সু-সম্পর্ক রেখে ভাটার কার্যক্রম চলছে। সাংবাদিক ছাড়াও ভাটায় অনেকে আসেন, তাই এ প্রতিবেদককে তাঁর মালিকের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে ইট ভাটার মালিক নুরুল হক কোম্পানীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই তিনি ‘কি করতে হবে’ প্রশ্ন করেন। এ প্রতিবেদকের পাল্টা প্রশ্নে তিনি জ্বালনী হিসেবে বনের কাঠ, মাটি ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে কাটা ড্রাম চুল্লি দিয়ে ইট ভাটার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন।

ইটভাটার মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, শুধু এবি ইটভাটা নয়, ঘুমধুমের কোন ইটভাটার জন্যই ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ওই ইটভাটায় গত বছরও অভিযান চালানো হয়। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনাক্রমে এবারও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাফায়েত মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, এসব অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন এবং অভিযান চালাতেও প্রস্তুত। তবে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তদবিরে ও হুমকিতে কিছুই করতে পারছেন না বলে জানান।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ঘুমধুমে কোন ইট ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই। তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কখনো তাঁকেও অবহিত করা হয়নি।

নাইক্ষ্যংছড়ি বন কর্মকর্তা আবদুস সবুর ভুইয়া বলেন, ইট ভাটায় জ¦ালানী মজুদ বা পোড়ানোর বিষয়ে ‘আমি এ সম্পর্কে অবগত না, আমাকে কেউ জানায়নি। এখন জানলাম, খোঁজ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, অবৈধ ইটভাটার মালিকরা মৌসুমের শুরুতেই মুনাফা লাভের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও পাহাড় কর্তন ও জ্বালানী ব্যবহারের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রতি বছর ইটভাটায় অবৈধ কার্যক্রম বাড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী মহল। এজন্য মৌসুমের শুরুতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে এসব অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন বলেও তারা মনে করেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ, ইটভাটা, নাইক্ষ্যংছড়িতে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন