নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে জুমের সোনালি হাসি
বান্দারবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড়ে পাহাড়ে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক। বর্তমানে জুম ক্ষেতে ধান কাটছে জুমিয়ারা। মৌসুমের শেষের দিকে চাষ হওয়া অনেক জুম ক্ষেতের ধান পাকেনি এখনও। কিন্ত অধিকাংশ পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। সুবাস ছড়াচ্ছে জুমের ফসল। জুমচাষিরা দল বেঁধে ধান কেটে ঘরে তুলছে জুমের ফসল। আবার সে সব ধান জুমেই মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াইকৃত ধান থুরংয়ে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে জুমচাষীরা।
আলীক্ষ্যং মৌজার ফতই হেডম্যান পাড়ার জুম চাষী মেনসন মুরুং জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশ ঠিকঠাক থাকায় ফলন হয়েছেও ভালো। এছাড়া জুমধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, চিনাল আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৬-৯ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পান জুমিয়ারা।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূল ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এবার নাইক্ষ্যংছড়ি তে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমে জুমে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হয়েয়ে জুম ক্ষেতে।
চাষীদের দাবি-জুম চাষের জন্য সার, বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা চান জুমিয়ারা। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জুমখোলার জুমচাষী অংক্যজাই জনান, এবার তার জুম চাষ ভালো হয়েছে। সে বেজায় খুশি এ কারণে। এছাড়া জুম ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছে সে। তাতেও ফলন ভালো হয়েছে তার। তার ধারণা গতবারের তুলনায় এবারও ভালো ফলন হয়েছে জুমে। তবে ভালো মানের উন্নত বীজ তারা পান না। সরকারের সহায়তাও নেই। এছাড়া সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেনি সে। পারলে ফলন আরও ভালো হতো বলে আশা করেন তিনি।
বর্তমানে উপজেলার ৫ ইউনিয়ন যথাক্রমে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, সোনাইছড়ি, বাইশারী, দোছড়ি ও ঘুমধুমের পাহাড়ে পাহাড়ে জুমক্ষেতে পাকা ধানে সয়লাব। যে গুলো সেই পুরোনো পদ্ধতিতেই করা হয়েছে। আর এ কারণে একর প্রতি ৫০ থেকে ৭০ আরি ধান কম হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় অভিজ্ঞ মহলের।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এবারে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ শত হেক্টর জুম চাষ করার কথা থাকলেও হয়েছে কম। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। উপজেলার ৫ ইউনিয়নের যে সব পাহাড়ে জুম চাষ হতো এখানে অন্য বাগান হচ্ছে সেখানে। আর জুমিয়ারাও আগ্রহ হারাচ্ছে এ চাষে।
তিনি আরো জানান, জুমে একসাথে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করে জুমিয়ারা। জুমের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রির পাশাপাশি পরিবারের সারা বছরের খাবারের জোগান দেয়। তার মতে, জুমে পুরাতন ঐতিহ্য বীজের পাশাপাশি বিভিন্ন আধুনিক জাতের ধান ও সবজির বীজ রোপণ করলে জুমচাষীরা লাভবান হবেন। অনেক জুমচাষী আধুনিক জাতের বীজ ব্যবহারে লাভবান হচ্ছেন। আমরা জুমচাষীদের আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষের জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করব।
স্থানীয় জুম চাষীদের দাবি, সরকার জুম চাষীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুবিধা দিলে আগামীতে জুম চাষ করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অধিকাংশ খাদ্য চাহিদা মিটবে। পাশাপাশি রপ্তানিও সম্ভব হবে।