নানিয়ারচরে ভূমি জটিলতায় থমকে গেল শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ

fec-image

রাঙামাটির নানিয়ারচরে ভূমি জটিলতায় থমকে গেছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প। নানিয়ারচর থানা পুলিশের আপত্তির মুখে নির্মাণ কাজ স্থগিত হয়ে পড়েছে। এতে শঙ্কায় পড়েছে নানিয়ারচর উপজেলার ক্রীড়াপ্রেমীরা।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এসংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) সৈয়দা সাদিয়া নূরিয়া।

এসময় নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান নুর জামাল হাওলাদার, ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আওলাদ হোসেন, এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মোকলেসুর রহমান, নানিয়ারচর থানার ওসি সুজন হালদার, উপজেলা রিসোর্স ইন্সট্রাকটর সরওয়ার কামাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব হাওলাদার, উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও বিশিষ্ট ঠিকাদার নুরুজ্জামান হাওলাদার, উপজেলা ক্রীড়া সম্পাদক রিপন দাশ, ছয়কুড়ি বিল মৌজা হেডম্যান মনিকা দেওয়ান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লুম্বীনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী চিরঞ্জিত চাকমা ও বিশিষ্ট ঠিকাদার কংজুরী মার্মাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

জাতিয় ক্রীড়া পরিষদের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আওলাদ হোসেন জানান, নানিয়ারচরে দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণ পক্রিয়ায় রয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্পটি। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইতোমধ্যে প্রকল্পটি পাশ হয়ছে। এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ হলে এলাকার তরুণ ও যুব সমাজ প্রাণচাঞ্চল্য ও চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি এবং খেলাধুলায় ভূমিকা রাখবে। সে কারণেই সরকার প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

তিনি আরো জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮৬টি উপজেলায় এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়রা অনুশীলন করতে পারবে। এতে করে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়বে। সার্বিকভাবে খেলাধুলার মানোন্নয়নে এই প্রকল্প সহায়ক হবে।

এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মোকলেসুর রহমান জানান, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ও অনুভূতির একটা প্রকল্প। দেশের খেলার মাঠগুলো যাতে কোনভাবে হারিয়ে না যায়, সে লক্ষেই এত বড় একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, সাময়িকভাবে একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এটি সমাধানের চেষ্টা করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এবিষয়ে কথা বলব।

জানতে চাইলে নানিয়ারচর থানার ওসি সুজন হালদার বলেন, ১৯৭৬ সালে নানিয়ারচর থানা প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এই জায়গাটি আমরা ভোগ দখল করে আসছি এবং এই মাঠটি ব্যবহার করে আসছি। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় থানার জন্য ৪ একর জমি বরাদ্দ এবং প্রত্যাশিত সংস্থাকে চাহিত ভূমির নামজারির নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে থানা কর্তৃপক্ষ আনুমানিক ৪৬ বছর তাদের নামে ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার পত্রালাপ করেন।

তিনি আরো বলেন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে জায়গা প্রয়োজন ৩ একর। অথচ এখানে জমি রয়েছে ১ একর। বাকি জায়গাটা ভরাট করলে কাপ্তাই লেকের মূল খাল ভরাট করতে হবে।

থানার পাশে স্টেডিয়াম নির্মাণে বাধা কিসে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, থানা এলাকার নিরাপত্তা এবং কাপ্তাই লেকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা থাকায় আমি আজকের মিটিং এ আলোচনা করেছি। এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছি।

এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রিপন দাশ বলেন, নানিয়ারচর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে এখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প কাজ শুরু হয়। গত মাসের মাসিক মিটিংয়ের দিনে আমরা সবাই মাসিক মিটিংয়ে ছিলাম। ঠিকাদার মাঠের নির্ধারিত জায়গায় লেবার শেড তৈরি করতে গেলে নানিয়ারচর থানা পুলিশ বাধা দেয়।

এর আগেও পুলিশের বাধার প্রক্ষিতে তৎকালীন ইউএনও ফজলুর রহমান ও এসি সুজন হালদারসহ মাঠে সরেজমিনে গিয়ে থানা এবং স্টেডিয়াম নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন সেদিন থানা নিরাপত্তার স্বার্থে ২০ ফুট বাড়তি জায়গা খালি রাখার নির্দেশ দেন। থানার পাশে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ হলে থানার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করিনা। বরং থানার পাশে স্টেডিয়াম হলে খেলাধুলা, জাতীয় দিবস পালনের পাশাপাশি থানা পুলিশের সদস্যরা এখানে প্যারেড ও বিভিন্ন মহড়া করতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, নানিয়ারচরের সন্তানরা আজ বিশ্ব দরবারে খেলছে। তারা দেশের মান উজ্জ্বল করছে। অথচ নানিয়ারচরে একটা ভাল মানের স্টেডিয়াম নেই এটা মানতে পারিনা। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ হলে এলাকাবাসী খেলাধুলার পাশাপাশি সুষ্ঠু বিনোদন পাবে। থানা কর্তৃপক্ষ যেহেতু নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করেই সিদ্ধান্ত নিবে। তবে আমি আশা করি দ্রুত সময়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হোক।

এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওহাব বলেন, নানিয়ারচর উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষে ২০১৯ সালে তৎকালীন নির্বাহী অফিসার মাসুদ পারভেজ মজুমদার একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন। স্টেডিয়াম নির্মাণে নানিয়ারচর থানার পেছনে ১ একর সমতল ভূমি ও ২ একর অগভীর জলাশয়ের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তিতে পুলিশ সেই জায়গায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় আশঙ্কায় আপত্তি তোলে। স্থানটি উপজেলা পরিষদ ও থানা সংলগ্ন এবং নানিয়ারচর জোনের অদূরে হওয়ায় এখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার প্রশ্ন থাকার কথা নয়। এছাড়াও উপজেলার জন্য নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামটি নির্মাণে হাইকোর্টের নির্দেশনার আওতায় আসার কথা নয়। কেননা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম কোন অবৈধ স্থাপনা নয়।

নানিয়ারচর উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও ঠিকাদার নুরুজ্জামান হাওলাদার বলেন, নানিয়ারচরের মানুষ ক্রীড়াপ্রেমী। এখানকার ছেলেমেয়েরা খেলাধুলায় অনেক ভাল অবস্থানে পৌছাচ্ছে। ইতোমধ্যে সাফ এশিয়ান নারী দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা তার স্বাক্ষর রেখেছে। খেলাধুলার মাধ্যমে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি পরিবেশ তৈরিতে নানিয়ারচরে একটি উন্নত মাঠ অতিব জরুরি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন