নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টার: কর্মচারীরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত, দেখার কেউ নেই

fec-image

সরকারের প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শাখা রাঙামাটির নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের কিছু কর্মচারী দিনের পর দিন কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এ যেন দেখার কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হর্টিকালচার সেন্টারের ফার্ম লেবার উমংসিং মারমা, রত্ন জীবন চাকমা, বসন্ত চাকমা, মংনচিং চৌধুরী, শুভ শান্তি চাকমা এবং নিরাপত্তা প্রহরী মো. ইয়াসিন হোসেন নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকেও তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছে।

ফার্ম লেবার শুভ শান্তি চাকমা চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ২৩ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের ৮তারিখ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না। তার প্রাপ্য ছুটি ছিলো ১৫দিন। তিনি প্রাপ্য ছুটির চেয়ে অতিরিক্ত ১দিন বেশি ছুটি কাটিয়েছেন।

উমংসিং মারমা নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের ৮তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিতি নেই। তার প্রাপ্য ছুটি ছিলো- ১০দিন। তিনি প্রাপ্য ছুটির চেয়ে অতিরক্ত ১৭দিন বেশি ছুটি কাটিয়েছেন।

রত্ন জীবন চাকমা নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের ৮তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিতি নেই। তার প্রাপ্য ছুটি ছিলো- ১০দিন। তিনি প্রাপ্য ছুটির চেয়ে অতিরিক্ত ৪দিন ছুটি কাটিয়েছেন।

বসন্ত চাকমা নভেম্বর মাসের ৩০তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের ৮তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিত নেই। তার কোন প্রাপ্য ছুটি না থাকলেও তিনি টানা ৯দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

মংনচিং চৌধুরী নভেম্বর মাসের ৬, ৭, ১৩, ২০, ২১, ২৭, ২৮ এবং ডিসেম্বর মাসের ৩, ৪, ৫ ৭ ও ৮ তারিখ কর্মস্থলে উপস্থিতি নেই। তার প্রাপ্য ছুটি ছিলো ৬দিন। তিনি প্রাপ্য ছুটির চেয়ে অতিরিক্ত ৬দিন বেশি ছুটি কাটিয়েছেন।

নিরাপত্তা প্রহরী মো. ইয়াছিন হোসেন ডিসেম্বর মাসের ১তারিখ থেকে ৮তারিখ পর্যন্ত কর্মস্থলে উপস্থিত নেই। তার প্রাপ্য ছুটি ছিলো ৩দিন। তিনি প্রাপ্য ছুটির চেয়ে অতিরিক্ত ৫দিন বেশি ছুটি কাটিয়েছেন।

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এসব কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিত থাকতে মৌখিখভাবে নির্দেশ প্রদান করলে তারা কর্মকর্তাদের সাথে হরহামেশা ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করে থাকে।

সরেজমিনে গেলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হর্টিকালচার সেন্টারে কয়েকজন ফার্ম লেভার রয়েছে যারা তাদের কথা শুনে না। ইচ্ছে হলে অফিসে আসে ইচ্ছে না হলে অফিসে আসে না। কিন্তু নিয়মিত বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করে যাচ্ছে।

তারা আরও জানান, এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। তিনি কর্মস্থলে যোগদান করলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন।

কর্মস্থলে অনুপস্থিত এইসব কর্মচারীদের উমং সিং মারমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি প্রতিদিন অফিস করি। কে বলছে আপনাকে এই কথা। আপনি দেখে যান।

রত্ন জীবন চাকমা মুঠোফোনে বলেন, আমি প্রতিদিন অফিস করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমি যেহেতু দূরে থাকি। তাই যেদিন অফিসে আসি না সেইদিন বাইরের একজন লোককে ৩০০-৪০০টাকা দিয়ে আমার কাজগুলো করিয়ে নেই। তিনি আরও জানান, শুধু আমি না আমাদের কর্মচারীরা যারা দূরে তারা কর্মস্থলে না আসলেও বাইরের লোককে নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়।

শুভ শান্তি চাকমা মুঠোফোনে বলেন, আমার মেয়ে খুব অসুস্থ। তাই উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে ছুটির দরখাস্ত দিয়ে এসেছি।

নিরাপত্তা প্রহরী মো. ইয়াছিন হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি প্রতিদিন হাজির থাকি। আমি কোনদিন অনুপস্থিত থাকি না।

এদিকে সরকার ২০১৯সালের ২ডিসেম্বর সরকারি চাকরিজীবীদের অফিসে নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে নতুন বিধিমালা জারি করছে । যা একই বছরে ৫ ডিসেম্বর এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

মূলত ‘গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২’ পরিমার্জন করে নতুন বিধিমালা করা হয়েছে। ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’র আওতায় সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা করা হয়েছে।

১৯৮২ সালের গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ আদালতের রায় অনুযায়ী বাতিল হয়ে গেছে। এখন ওই অধ্যাদেশটি যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। মূলত অধ্যাদেশের বিষয়গুলোই বিধিমালায় এসেছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। কোনো কর্মচারী অনুমতি ছাড়া অফিসে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর যুক্তিসংগত সুযোগ দিয়ে কর্মচারীর প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কেটে নিতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী অফিস ত্যাগ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, জরুরি প্রয়োজনে অফিস ত্যাগের ক্ষেত্রে সহকর্মীকে অবগত করে অফিস ত্যাগ করা যাবে। সংরক্ষিত রেজিস্টারে অফিস ত্যাগের কারণ, সময়, তারিখ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করতে হবে।

কোনো সরকারি কর্মচারী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া দেরিতে অফিসে উপস্থিত হতে পারবেন না উলে­খ করে বিধিমালায় বলা হয়েছে, এই বিধান লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে প্রতি দু’দিনের বিলম্বে উপস্থিতির জন্য একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটা যাবে।

এছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী ৩০ দিনের মধ্যে একাধিকবার বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিতি, অফিস ত্যাগ ও দেরিতে অফিসে উপস্থিত হলে ওই কর্মচারীর আরও অতিরিক্ত সাতদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ কাটা যাবে।

বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারীর বেতন কাটা হলে তিনি তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পুনর্বিবেচনার কোনো আবেদন করা হলে, আদেশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে শুনানির যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে, বেতন কর্তনের আদেশ সংশোধন বা বাতিল রাখতে পারবে। পুনর্বিবেচনার আবেদন শুনানির ক্ষেত্রে সাক্ষ্যের সংক্ষিপ্তসার, প্রাপ্ত তথ্যাদি এবং সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীর মাসিক বেতন বিল থেকে দন্ডের অর্থ কেটে আদায় করতে হবে। ওই কর্মচারী নিজের বিল নিজে উত্তোলনকারী হলে, তাকে বেতন বিল থেকে দন্ডের অর্থ কাটার নির্দেশ দিতে হবে। নির্দেশের কপি হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠাতে হবে। ওই কর্মচারী বেতন বিল থেকে দন্ডের অর্থ কর্তন না করলে হিসাবরক্ষণ অফিস তা কেটে বিল পাস করবে বলে সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালায় উলে­খ করা হয়েছে।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নিজের বিল নিজে উত্তোলনকারী না হলে তার বেতন থেকে দন্ডের অর্থ কাটার লিখিত নির্দেশ দিতে হবে এবং নির্দেশের কপি সংশ্লিষ্ট হিসাব শাখায় পাঠাতে হবে।

নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানে নভেম্বর মাসের ৩০তারিখ সদ্য যোগদান করেছি। আগে সিনিয়ন কর্মকর্তা শফিক স্যার ছিলেন। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমি দিনাজপুরে ট্রেনিংয়ে আছি। কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফাঁকিবাজি করছে আমি সে বিষয়ে অবগত হয়েছি। আমি ২০২১সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যে পুরোদমে অফিস করবো। আশা রাখি যারা ফাঁকিবাজি করছে তাদেরকে ঠিক করতে পারবো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে, নানিয়ারচর হর্টিকালচার সেন্টার, রাঙামাটি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন