parbattanews

নাফ নদ থেকে বালু তুলে ট্যুরিজম পার্ক ভরাট, ঝুঁকিতে জেটি ও বেড়িবাঁধ

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ অংশের নাফ নদ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের নিচু এলাকা। আর এতে ঝুঁকিতে পড়েছে শাহপরীর দ্বীপের পর্যটন জেটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়, প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ, সীমান্ত সড়কসহ নানা স্থাপনা।

মেসার্স চায়না হারবাল নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ১৮ ডিসেম্বর বিকেলে বেড়িবাঁধের ওপর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন দ্বীপের কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু এখনো বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বালু উত্তোলনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি। বালু উত্তোলন বন্ধের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন নীরব।

শাহপরীর দ্বীপের প্রবীণ শিক্ষক ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদ হোসেন জানান, প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় ১৪ কিলোমিটার ‘সীমান্ত সড়ক’ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন সেই বাঁধের কাছাকাছি নাফ নদ থেকে দিনরাত সমানে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে শাহপরীর দ্বীপে ওঠা–নামার পর্যটন জেটি, বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি, প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পড়ছে। সাবরাং অর্থনৈতিক জোনের নিচু এলাকা ভরাটে বালুর প্রয়োজন হলে নাফ নদের অদূরে ভেসে ওঠা চর থেকে বালু সংগ্রহ করা যায়। এতে সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌপথে জাহাজ ও মাছ ধরার নৌকার চলাচল সহজ হতো। বালু উত্তোলন বন্ধে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশাল মানববন্ধন করেছেন। প্রতিকার না পেয়ে উদ্বিগ্ন দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষ।

সাবরাং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (শাহপরীর দ্বীপ) সদস্য রেজাউল করিম জানান, বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দ্বীপের ক্ষতি করে বালু উত্তোলনের অধিকার কারও নেই। নদের তীর থেকে বালু উত্তোলনের ফলে জেটি ধসে পড়তে পারে। জেটির পাশেই বিজিবি ক্যাম্প। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, একটি প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নাফ নদ থেকে বালু উত্তোলন করে প্রতি ঘনফুট ছয়-সাত টাকায় বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাফ নদ থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা জানান, নাফ নদ থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে কেউ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের আবেদন কিংবা লিখিতভাবে জানায়নি। তবে বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকার লোকজন দপ্তরে এসে অভিযোগ করেছেন। পরিবেশের ক্ষতি করে কারা বালু উত্তোলন করছেন, তা দেখতে তিনি ঘটনাস্থল যাবেন। তারপর দেখবেন কী করা যায়।

গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক থেকে লোহার পাইপের লাইন টেনে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়া মৎস্যঘাট পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার নেওয়া হয়েছে। পাইপের ভেতর দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে পার্কে। বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত লোকজন বিদেশি। তাঁরা কারও সঙ্গে কথা বলেন না।

বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চায়না হারবালের স্থানীয় ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মারুফ মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। নাফ নদের ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দূর থেকে তাঁরা বালু উত্তোলন করছেন। এতে পরিবেশেরও তেমন ক্ষতি হচ্ছে না। তাহলে দ্বীপবাসী আন্দোলন ও মানববন্ধন করছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, বাঁধের কাছাকাছি সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কি না এবং বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধের ক্ষতি হবে কি না, তা যাছাই করে দেখা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবরাং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম জানান, নাফ নদের জোয়ারের ধাক্কায় কয়েক বছরে শুধু জালিয়াপাড়ারই চার শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। এখন অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান, সরেজমিনে তিনি নাফ নদ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে চায়না হারবালকে নিষেধ করেছিলেন। এখন পুনরায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কি না, দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে জোয়ারের ধাক্কায় শাহপরীর দ্বীপের এক হাজার একরের মতো ফসলি জমি, মৎস্য খামার এবং ঘোলারচর নামের একটি গ্রামের বসতঘর সাগরে বিলীন হয়েছে। বিলীন হতে হতে দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝেরপাড়া ও হাজীপাড়া ছোট হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে নদ থেকে বালু উত্তোলন করলে শাহপরীর দ্বীপের ঝুঁকি আরও বাড়াবে।

সূত্র: প্রথম আলো

Exit mobile version