নির্বাচনী আমেজ নেই নাইক্ষ্যংছড়ির তিন ইউপিতে

fec-image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটিতে একাধিক ও দুটিতে নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন এখনো জমে উঠেনি। নির্বাচনী ক্যাম্পে সমর্থকদের উৎসবমূখর উপস্থিতি দেখা মিলছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোন উৎসাহ, উদ্দীপনা বা আমেজ এখনো ফুটে উঠেনি। যার কারণে ভোটারদের মন গলাতে প্রার্থীদের ঘাম ঝরছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে প্রার্থী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে উপজেলা সদরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান- সরকারি কোন অনুষ্ঠান ছাড়া উপজেলা সদরে নির্বাচন কেন্দ্রিক তেমন মানুষের সমাগম হয়না। যার কারণে চায়ের টেবিলে নির্বাচনী আলোচনা খুবই কম। তবে কয়েকদিনের মধ্যে এই আমেজ বাড়তে পারে বলে তাদের ধারণা।

চাকঢালা ৪নং ওয়ার্ডের ভোটার নুরুজ্জামান, নুরুল আলম, আবদুল গফুর জানান- বিগত নির্বাচন সমূহের তুলনায় চলমান ইউপি নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তাপ নেই। স্থানীয় রাজনীতির কৌশলগত কারণে সাধারণ ভোটাররাও আগের মতো প্রকাশ্যে নিজেদের মত প্রকাশ করতে চান না।

জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে দ্বি-মুখী লড়াই চলছে। বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যকার নির্বাচনী আমেজ নেই এমনটা বলছেন স্থানীয়রা। আর এই কারণে সাধারণ ভোটাররাও মুখ খুলছেন না। তবে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এক প্রার্থীকে নিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে ভোটের মাঠে। এই ইউনিয়নে তথ্য প্রমাণ না রেখে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ঘোড়া প্রতিকের পক্ষে গোপনে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে ভোটারদের সাথে আলাপে জানা যায়, নির্বাচনের এখনো ১৩দিন বাকি থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনী সভা সমাবেশ তেমন চোখে পড়ছে না। উপজেলা সদরে প্রার্থীদের পোষ্টার দেখা গেলেও নির্বাচনী আমেজ নেই বললেই চলে। এর দুটি কারণ হিসেবে দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। সদর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেম্বার নির্বাচিত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হওয়ার কারণে অনেকটা আমেজ হারিয়েছে এবারের ভোট। ঠিক একই ভাবে ৭নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেম্বার নির্বাচিত হওয়ায় সেখানেও নির্বাচনী আমেজকে ফিকে করেছে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি তসলিম ইকবাল চৌধুরী। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতিক নিয়ে লড়ছেন যুবলীগ নেতা নুরুল আবছার। উভয়ে আওয়ামী পরিবারের সদস্য। বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে একজন সর্বদলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মন জয় করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্যজন আওয়ামী লীগের ভোটারদের পাশাপাশি নৌকা বিরোধী মানুষদের ভোট ব্যাংক হিসেবে দেখছেন।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক নিয়ে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যানিং মার্মা। তার বিপরীতে নৌকার বিরোধী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বাহান মার্মা। তরুণ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব হিসেবে এ্যানিং মার্মা সাধারণ ভোটারদের নজর কেড়েছেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরবর্তী হঠাৎ করেই নিজ দলীয় কর্মী সমর্থক দ্বারা কিছু প্রচারণা নির্বাচনী মাঠে ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে চেয়ারম্যান হিসেবে বিগত সময়ে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও বয়সের কারনে নূজ্য বাহান মার্মারও বেগ পেতে হচ্ছে ভোটারদের মন জয় করতে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। ওই ইউনিয়নে তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূলত বিএনপি সমর্থিত রশিদ আহমদের ঘোড়া প্রতিকের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা হবে নৌকার। পারিবারিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গোপনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে ভোটের মাঠে আলাপ আলোচনায় এগিয়ে রাখছেন। তবে বিগত পাঁচ বছরে মানুষের সেবা ও ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে পুনরায় বিজয়ী স্বপ্ন দেখছেন জাহাঙ্গীর আজিজ।

অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও সোনাইছড়িতে বিরোধী শক্তি বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের মাঝেও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আবেগ, উচ্ছাস বা উদ্দীপনা নেই। নির্বাচনকে তারা আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই ভোট হিসেবে দেখছেন।

নির্বাচনী পরিবেশের বিষয়ে রির্টানিং অফিসার আবু জাফর ছালেহ বলেন- সাধারণ ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন এবং প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেন সে জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আচরণবিধির দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন