নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার জান্তা সরকার

fec-image

মিয়ানমারে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নতুন একটি কঠোর নতুন আইন ঘোষণা করেছে সামরিক বাহিনী (জান্তা সরকার)। সামরিক অভ্যুত্থানের দুই বছরের মাথায় দেশটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জান্তা সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক শাসনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ চলমান থাকা অবস্থায় এই নির্বাচনের আয়োজন আরও রক্তপাতের কারণ হতে পারে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় জান্তার পরিকল্পিত নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অবাধ হবে না। এক বিশ্লেষক এটিকে জান্তার ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিকে ন্যায্যতা দেওয়ার নাটক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

২০২০ সালের নভেম্বরে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে সু চিকে বন্দি করে।

রাজনৈতিক বিরোধিতা কমে আসা এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও চীনের কৌশলী সমর্থন পাওয়ার পর এই বছরের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে মিয়ানমার জান্তা। দেশটির সংবিধান অনুসারে, আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

তবে পাহাড়ি জঙ্গল এবং সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু সমতলে সামরিক শাসনের বিরোধিতা চলমান রয়েছে। এসব এলাকা থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য সংগ্রহ করা হয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এসব বিস্তৃত ভূমির মানুষেরা ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন। কারণ ভোট দিলে জান্তাবিরোধীদের ক্রোধের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ইয়াঙ্গুনে কাজ করা সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, জান্তা আয়োজিত যেকোনও নির্বাচন হবে এক চাকার গাড়ি। এতে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হওয়ার সুযোগ নেই।

থাই সীমান্তে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স-এর এক সদস্য লিন লিন বলেছেন, মিয়ানমারের রাজনীতি থেকে সামরিক বাহিনীকে উপড়ে ফেলার লক্ষ্য থেকে নির্বাচন তাদের সরিয়ে দিতে পারবে না। আমরা নিজেদের নির্বাচিত সরকার পাওয়ার আগ পর্যন্ত অস্ত্র নিয়ে লড়াই করব।

অভ্যুত্থান পরবর্তী সহিংসতায় দশ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। জান্তাবিরোধীদের দমনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিকদের ওপর বোমা ও গোলাবর্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, মিয়ানমার বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখে রয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বাড়ছে।

জান্তার আরোপিত রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হচ্ছে জানুয়ারিতে। এই মেয়াদ শেষের পর সংবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষকে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এখনও নির্বাচনের কোনও তারিখ ঘোষণা করেননি। তবে গত সপ্তাহে বিদ্যমান ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য দুই মাসের সময় দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জান্তা সরকার, নির্বাচন, মিয়ানমার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন