পদ্মা সেতু: আনন্দ-উল্লাসে খাগড়াছড়ি জেলাবাসী


স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর চোখেমুখে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। পদ্মা সেতু নিয়ে জেলাবাসীদের কৌতূহল দ্বিগুণ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সাহসী ব্যক্তি।তিনি নিজের কথা না ভেবে দেশ এবং মানুষের কথা ভাবেন। তাঁর এই সাহসী উদ্যোগের ফলে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত ইমারত “স্বপ্নের পদ্মা সেতু”র শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আমি খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর পক্ষ থেকে এমন দুর্লভ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পৌরসভার সচিব পারভীন খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জেনে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমি খাগড়াছড়ি পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহ আলম জানান, সরকারে এমন সাহসী উদ্যোগের ফলে আজ আমরা “স্বপ্নের পদ্মা সেতু “পেয়েছি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নারী নেত্রী নমিতা চাকমা বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য দুর্লভ একটি স্বপ্ন। বাংলাদেশের প্রধান শেখ হাসিনা এমন সাহসী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই।
খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বাবলী ত্রিপুরা বলেন, স্বপ্নের পদ্মা শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে জেনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জননেত্রী (শেখ হাসিনা)’র প্রতি কৃতজ্ঞা জানাচ্ছি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সাগর জানান, পদ্মা সেতুর স্থানীয় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানসহ সারাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
বহুমুখী পদ্মা সেতু নিয়ে দেশবাসীর খাগড়াছড়ি জেলা জেলাবাসীও উৎফুল্ল। এ সেতুর জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পদ্মা সেতুর প্রাক -সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অঙ্গীকার করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই অঙ্গীকার থেকে সংস্থাটি সরে যায়। এ ধরনের কাজের শর্ত অনুযায়ী মূল ঋণদাতা চলে গেলে চলে যায় অন্যরাও। কাজেই একে একে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ।