parbattanews

পরিবেশ বিপর্যয়ে বিপন্ন সোনাদিয়ার চামচ ঠুটো বাটান

মহেশখালী (কক্সবাজার)সংবাদাতা:
সোনাদিয়ায় পর্যায়ক্রমে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জীব বৈচিত্র। সোনাদিয়া দ্বীপে জনবসতি বেড়ে যাওয়ার কারণে দিন দিন সামুদ্রিক গাছপালা ও প্রাণী গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোনাদিয়া উপকূলে অতিথি পাখি আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সোনাদিয়ার জীব বৈচিত্র রক্ষা করতে এখনো উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের আওতায় “সোনাদিয়া দ্বীপে শীতকালীন সময়ে বিপন্ন ‘চামচ টুঠো বাটান’ এর আবাসস্থল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক একটি গবেষণা কর্মে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ জুন দুপুরে শহরের হোটেল শৈবালের সম্মেলন কক্ষে এ প্রকল্পের বাৎসরিক রিপোর্ট প্রদান অনুষ্ঠানে গবেষকরা এসব তথ্য জানান।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের গবেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শের ইবনে আলম বলেন, চামচ টুঠো বাটান এক জাতের ছোট পাখি। গ্রীষ্মে উত্তর পূর্ব রাশিয়া বিশেষত সাইবেরিয়াতে এরা বাসা বাঁধে। পরে উপকূল ধরে উড়ে এসে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশেষত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে বাসা বেঁধে থাকে উপকূলীয় এলাকার কাদাচরে বা সৈকতের কাছাকাছি নরম মাটিতে। বাংলাদেশ যেহেতু এ পাখির শীতকালীন আবাসস্থল তাই এর সংরক্ষণে আবাসস্থলের সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে মাত্র ১ জোড়ার মধ্যে এ পাখি বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে ২০ টি ও সন্দ্বীপে ৩৬ টি দেখা গেছে। বাংলাদেশে অনেক দ্বীপ থাকতেও এ পাখি সোনাদিয়া দ্বীপকেই আবাসস্থল হিসেবে বেঁচে নিয়েছে বেশি। তাই সোনাদিয়া দ্বীপে শুধু এ পাখি নয় সমস্ত জীব বৈচিত্র রক্ষা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপে ১০০ প্রজাতির গাছ পালা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৮৭ শতাংশ দেশিয় জাতের গাছ। আর ১৩ শতাংশ বিদেশি জাতের গাছ। বিদেশি জাতের এসব গাছ পরিবেশের জন্য উপকারি নয়। যার প্রভাবে সিংহভাগ দেশিয় প্রজাতির গাছ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, শুধুমাত্র চামচ টুঠো বাটান নয় সোনাদিয়া দ্বীপের সমস্ত পাখি, প্যারাবন থেকে শুরু করে সব কিছুই রক্ষা করতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারে দ্বীপে বসবাসরত স্থানীয় জনগণ।

কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনবসতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এ দ্বীপ থেকে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি হারিয়ে গেছে। অনেক জীব বৈচিত্রও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দ্বীপে ১৫০ পরিবারের বসবাস। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলে পরিবেশের ভারসাম্য অচিরেই নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশংকা করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বনবিভাগের আওতায় এসআরসিডব্লিউপি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প হিসেবে এখন ২য় পর্যায়ে (এপ্রিল ২০১৫-জুন ২০১৬) পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। গবেষণায় বিপন্ন চামচ টুঠো বাটান ছাড়াও উপকূলীয় সকল জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা উঠে এসেছে সেগুলো সমাধানে শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবুল কামাল।

Exit mobile version