পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরায়েল

fec-image

দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার ড্রোন হামলার পাশাপাশি কয়েক শ ইসরায়েলি সেনা সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার নিয়ে এই পশ্চিম তীরে অভিযান অব্যাহত রাখবে ইসরাইল অভিযান চালায়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ অভিযানকে ‘সন্ত্রাস দমনের প্রচেষ্টা’ বলে দাবি করেছে।

বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থী সরকারের অধীনে কয়েক বছরের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় অভিযান।

সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনি শিবিরের ভেতরে এবং শহরের আশপাশে অবস্থান করছে। সেখানে বন্দুকযুদ্ধ ও বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে এবং ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়েছে। ইসরায়েল এরই মধ্যে জেনিন শহরে এবং পাশের শরণার্থী শিবিরে অভিযান জোরদার করেছে। তারা মনে করে, এখানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকালের অভিযানে আটজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৫০ জন। যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুই সপ্তাহ আগে জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানে সাতজন নিহত হয়েছিল।

জেনিনে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের পরিচালক মাহমুদ আল-সাদি বলেন, ‘একদিকে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে ভূমি থেকে আক্রমণ হয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও জায়গা ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখান থেকে কেবল ধোঁয়া উঠছে।’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের সেনারা একটি ‘যৌথ আভিযানিক কেন্দ্রে’ আক্রমণ করেছে, যেখান থেকে জেনিন ব্রিগেড নামে স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী কার্যক্রম পরিচালনা করত।

পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নিয়ন্ত্রণাধীন বলা হলেও সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর আধিপত্য রয়েছে। পশ্চিম তীরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ফিলিস্তিনিদের হাতে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা একটি ‘পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধান’ কেন্দ্র তথা একটি অস্ত্রের গুদাম ও ইসরায়েলিদের ওপর হামলাকারীদের অবস্থান লক্ষ্য করে এ অভিযান চালাচ্ছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন জেরুজালেমে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে (জেনিনের একাংশে) ব্যাপক শক্তি দিয়ে আঘাত করছি।’

গত বছরের শুরু থেকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সহিংসতার পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জোটে কট্টরপন্থী পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীরা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেকট সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিবিরের লোকেরা ভেবেছিল আমরা সম্ভবত ভেতরে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আকাশ থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পদ্ধতি তাদের অবাক করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, “আমরা এখনো অস্ত্র ও গোলাবারুদ’ ও ‘অবকাঠামো’ বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করছি। এ অভিযান কখন শেষ হবে তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।” সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তাদেরই একজন সৈন্য সামান্য আহত হয়েছে।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম তীর দখল করে আছে ইসরায়েল। সংযুক্ত পূর্ব জেরুজালেম বাদে এই অঞ্চলটিতে বর্তমানে প্রায় চার লাখ ৯০ হাজার ইসরায়েলির বাস করছে। এখানে তাদের বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র চায়। তারা চায় ইসরায়েল ছয় দিনের যুদ্ধে দখল করা সমস্ত ভূমি থেকে সরে যাক এবং সমস্ত ইহুদি বসতি ভেঙে ফেলুক।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিষয়টির ‘মীমাংসা জোরদার’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ঠিকই, তবে তিনি শান্তি আলোচনার বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পৃথক ঘটনায় পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের কাছে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে আরেক ফিলিস্তিনি যুবক নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি সশন্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘জেনিনে আগ্রাসনের জবাবে শত্রুকে (ইসরায়েল) আঘাত করার জন্য সব বিকল্প পথ খোলা রয়েছে।’

প্রতিবেশী জর্দানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিনান মাজালি জোর দিয়ে বলেন, ‘চলমান উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’ গত মাসে জেনিনে ইসরায়েলের অভিযানের পর এলির পশ্চিম তীরের বসতির কাছে একটি পেট্রল স্টেশনে দুই ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীর হামলায় চার ইসরায়েলি নিহত হয়। পরে হামলাকারীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়।

সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: অভিযান, ইসরায়েল, পশ্চিম তীর
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন