পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান দেখে পালাল ভারতের ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান

fec-image

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিবদমান কাশ্মীর সীমান্তের (নিয়ন্ত্রণ রেখা—লাইন অব কন্ট্রোল বা এলওসি) কাছে টহল দিচ্ছিল ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান। সেই বিমানগুলো ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভির এক প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পিটিভি বুধবার (৩০ এপ্রিল) জানান, পাকিস্তান বিমানবাহিনী (পিএএফ) তাদের যুদ্ধবিমান ওড়ালে কাশ্মীরের ওপর টহলরত ভারতীয় যুদ্ধবিমান পিছু হটতে বাধ্য হয়। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীয় হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এমনিতেই উত্তেজনা চলছিল, এই ঘটনা তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভারত অবশ্য এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের পাকিস্তানের যোগাযোগ রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এই ঘটনায় কোনো ধরনের জড়িত থাকার কথা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।

পিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ভারতীয় রাফাল ‘যুদ্ধ) বিমান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গত ২৯ এপ্রিল গভীর রাতে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর চারটি রাফাল জেট ভারতীয় ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে থাকা অবস্থায় অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের ওপর টহল দেয়। পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বিমানগুলি তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোকে শনাক্ত করে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের ফলে, ভারতীয় রাফায়েল বিমানগুলি আতঙ্কে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নিরাপত্তা সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনী সর্বদা ভারতীয় যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।’

এদিকে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাবে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। সংবাদ সম্মেলনে তারার বলেন, পাকিস্তানের কাছে ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ রয়েছে, যা থেকে জানা গেছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে।

তথ্যমন্ত্রী তারার বলেন, ‘পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ভারত পেহেলগাম হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।’ এ সময় তিনি এই হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার ভারতীয় অভিযোগকে ‘একেবারেই ভিত্তিহীন ও মনগড়া অভিযোগ’ বলে আখ্যা দেন।

এর আগে, পাকিস্তানে যেকোনো ধরনে অভিযান পরিচালনার জন্য ভারতের সশস্ত্রবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক বৈঠকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতার ওপর পূর্ণ আস্থা জানান মোদি। তিনি বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার সময়, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং কোন প্রক্রিয়ায় জবাব দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ রয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানান, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় সামরিক আগ্রাসন আসন্ন। খাজা আসিফ বলেন, ‘আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করেছি, কারণ যেকোনো মুহূর্তে একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্তও নিতে হয়। আমরা ইতিমধ্যে সেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে নতুন করে এই উত্তেজনা শুরু হয় ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নৃশংস এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন তিনজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি বলেও দাবি তাদের। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করেছে পাকিস্তান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন