parbattanews

‘পাথর ও প্রবাল’ রক্ষা হলেই টিকে থাকবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের পার্শবর্তী ৮.৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ। স্বচ্ছ পানি ও চারপাশ জুড়ে প্রবাল পাথর বেষ্টিত মনোলোভা পুরো দ্বীপটিই যেন নৈস্বর্গিক।

পর্যটনের রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন সময়ে দূষণ, পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড-সহ নানা কারণে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সাগর রত্ন ‘প্রবাল’। তাই একে রক্ষা করা না গেলে সেটা হবে প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক আশ্চর্য সামুদ্রিক পরিবেশে বিরাজ করা কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীই হচ্ছে কোরাল বা প্রবাল। বিশ্বে যখন মানুষে-মানুষে দ্বন্দ্ব, মারামারি, হিংসা, তখন বর্ণিল এই প্রাণীগুলো শুধু সারাটা জীবন নয়, মরণের পরও সংঘবদ্ধ হিসেবে বাস করে। মৃত কোরাল এর দেহ স্তুপ হয়ে জমা হয়ে নানা আকৃতির কাঠামো তৈরি করে। মৃত কোরালের এ আকৃতিই হচ্ছে ‘কোরাল রিফ’ বা প্রবাল দ্বীপ। প্রবাল প্রচুর সংখ্যায় স্বীয় বংশবৃদ্ধি করে তখনই যখন সমুদ্রের জল স্বচ্ছ, স্থির ও উষ্ণ অবস্থায় থাকে।

প্রায় ৯ হাজার মানুষের বসবাসরত প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের অপরূপ ও মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত থাকে। দিনদিন বৃদ্ধি পায় পর্যটকদের বিচরণ। দ্বীপে প্রতিদিন ৬টি জাহাজ ৭ হাজারের অধিক পর্যটক নিয়ে যাতায়ত করে। প্রাকৃতিক প্রবাল দ্বারা আচ্ছাদিত এ দ্বীপে পর্যটকদের রাত্রিযাপনে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে ১০৪টি আবাসিক হোটেল। পাশাপাশি খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব আবাসিক হোটেল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে প্রাকৃতিক পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এসব হোটেলে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এসব বর্জ্যরে পাশাপাশি সমুদ্রের পানিতে পড়ছে পর্যটকদের ব্যবহৃত নানা প্লাস্টিক। উত্তোলন করা হচ্ছে প্রবাল।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ। ৩ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের চারদিকে রয়েছে প্রবাল, পাথর সহ প্রায় কয়েক শত প্রজাতির সামুদ্রিক জীব। জনশূন্য ছেঁড়া দ্বীপের অপরূপ দৃশ্য দেখতে কাঠের অথবা স্পীড বোটে ছুটে যাচ্ছে পর্যটকরা। এতে দিন দিন এ দ্বীপের প্রবাল-সহ জীববৈচিত্র, পরিবেশ প্রকৃতি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কারণে এ দ্বীপে পরিবেশগত নানা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রবাল সহ জীববৈচিত্র। বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে নানা প্রাণী। দ্বীপের জীববৈচিত্র রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার।

বিশিষ্ট পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও আইইউসিএন এর সাবেক কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং সংবেদনশীল। সেন্টমার্টিন একটি পাথরের দ্বীপ। পরিচ্ছন্ন পাথর ও স্বচ্ছ পানি সহ বিশেষ প্রতিবেশ থাকায় এখানে প্রবাল এসে জন্ম নিয়েছে। প্রাকৃতিক অবকাঠামো বিশেষ করে পাথরের উপর ভিত্তি করেই এ দ্বীপটি টিকে রয়েছে। সেগুলো যদি ব্যাহত হয় তাহলে দ্বীপের বিপর্যয় হবে। এছাড়াও পাথর উত্তোলন করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রবাল উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। এসব যদি বন্ধ করা না যায় শুধু প্রবাল রক্ষা নয় দ্বীপটিও রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

Exit mobile version