parbattanews

পানছড়িতে ক্যাপ্রুচাইয়ের ফুটবল পাঠশালা

খাগড়াছড়ি জেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলার নাম পানছড়ি। উপজেলার বেশীর ভাগ লোকের বসবাস দারিদ্র্য সীমার নীচে। এই প্রত্যন্ত এলাকার গরীব পরিবারের কিশোর/কিশোরীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পানছড়ি ফুটবল একাডেমি।

এই একাডেমিতে সম্প্রদায় ভেদাভেদে দশ থেকে আঠারো বিশ বয়সী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার কিশোর-কিশোরী ফুটবল প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে উপজেলা পরিষদ মাঠে দেখা যায় ক্ষুদে ফুটবলারদের মিলনমেলা। ওয়ার্মআপ শুরুর আগে নিয়মিত হয়ে থাকে পাঠদান। যার মাঝে রয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য কিছু উপদেশ।

প্রথমেই খেলাধুলার চেয়ে লেখাপড়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়া, মা-বাবা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান করা, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের দেয়া কাজ বাড়িতে অধ্যয়ন করা ও মাদক থেকে দুরে থাকা। এ সব যারা মেনে চলবে তারাই একাডেমিতে খেলার সুযোগ পাবে। বর্তমানে একাডেমিতে প্রায় শতাধিক কিশোর ও চল্লিশ জন কিশোরী ফুটবলার রয়েছে। এই ফুটবল একাডেমি গড়ার মূল কারিগর খাগড়াছড়ি জেলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ক্যাপ্রুচাই মারমা।

ক্যাপ্রুচাই মারমা পানছড়ি চৌধুরী পাড়ার রিপ্রুচাই মারমার সন্তান। ক্যাপ্রুচাই মারমা কিশোর বয়সে বিকেএসপিতে ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়। এর পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন লীগে অংশ নিয়ে দীর্ঘবছর দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিল দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দিয়ে। বয়স ত্রিশ পার হলেও বিভিন্ন টূর্ণামেন্টে এখনো দাবড়িয়ে বেড়ায় পুরো মাঠজুড়ে। পানছড়ির ফুটবলের এই আইডল এখন কাজ করছে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে।

২০১৫ সালে গড়ে তোলা একাডেমির খেলোয়াড়রা বয়স ভিত্তিক বিভিন্ন টূর্ণামেন্টে এনে দিয়েছে দারুণ সফলতা। যার মাঝে বসুন্ধরা কিংসে ইয়েস কার্ড পাওয়া রাশেদ, বিকেএসপিতে প্রায় সাত মাস ধরে প্রশিক্ষণ নেয়া যোবাইর ইমন, গোলকিপার ছোটন, অমিক, ডিফেন্ডার জসিম, নাজিম, গোলমেশিন জুয়েল, লেফট ব্যাক জমং থোয়াই, রাইট ব্যাক অংসিউ মারমারা খেলেছে ডেভেলপমেন্ট কাপ। অনুর্ধ্ব পনের দেশের সেরা চল্লিশে এখনো টিকে আছে এই একাডেমির ইমন ও অমিক।

পানছড়ির বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই ছাত্ররাই আন্ত: স্কুল ফুটবলে বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইব্রেকারে হেরে রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ঢাকা পাইওনিয়ারেও একাডেডমির ক্ষুদে ফুটবলাররা মেডিকেল টেষ্ট শেষ করে এখন মাঠে নামার প্রহর গুনছে। কিশোরদের পাশাপাশি কিশোরীরাও অনেক এগিয়েছে ফুটবলে। এবার জেলা টিমের হয়ে ৫জন অংশ নিয়েছে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে।

মিডফিল্ডার থুইমুনা মারমা রাঙামাটি জেলা টিমের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলতে গিয়ে উপহার দিয়েছে প্রাণবন্ত খেলা। বর্তমানে প্রতিদিন উপজেলা পরিষদ মাঠে একাডেমির ওয়ার্মআপ দেখার জন্যও ছুটে আসে দর্শণার্থীরা।

একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক ও খেলোয়াড় গড়ার মূল কারিগর ক্যাপ্রুচাই মারমা জানায়, প্রথম প্রথম কিশোর/কিশোরীদের সংখ্যা কম হলেও এখন আর মাঠে সংকুলান হচ্ছেনা। তাই উপজেলা পরিষদ মাঠের পাশাপাশি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও চলে ওয়ার্মআপ। আধুনিক ওয়ার্মআপ ও খেলার নানান কলা-কৌশল সর্ম্পকে প্রাথমিক ধারণা থেকেই তাদের তৈরি করা হয়। এখানে সবাই গরীব পরিবারের বিধায় ফুটবল, বুট, জার্সি ও মেডিকেল সেবা সমুহ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। যার সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহজাহান কবির সাজু। তাঁর দেখাশুনা ও সকল ধরণের সহযোগিতার ফলেই আজো টিকে আছে একাডেমির কার্যক্রম। এ বয়সীদের মাদক ও ফেইসবুক নেশা থেকে মুক্তি পেতে খেলার কোন বিকল্প নাই বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল একাডেমিকে ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়ের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করে ক্ষুদে ফুটবলারদের মনে খুশীর জোয়ার বইয়ে দিয়েছিল।

খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ধুমকেতু মারমা জানান, পানছড়ির মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ফুটবল একাডেমি গঠন করে টিকে থাকা বিশাল ব্যাপার। তাছাড়া সফলতাও তারা পাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা একাডেমিকে ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান করে ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন। এলাকার বিত্তবানরাও খেলাধুলার সামগ্রীসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে উৎসাহ প্রদান করে এগিয়ে আসা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

Exit mobile version