parbattanews

পানছড়িতে বাল্য বিবাহের ছড়াছড়ি

বাল্যবিবাহ

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় সর্বত্রই এখন বাল্য বিবাহের ছড়াছড়ি। তার সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে বহু বিবাহ ও ঘর পালানোর সংখ্যা। এসব ঘটনা যেন এখন পানছড়ির জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।

জানা যায়, এলাকার স্কুল পড়ুয়া ১৩/১৪ বছর বয়সী ছাত্রীরা যেন মা-বাবার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের নামে কোমলমতি এই শিশুমনা মেয়েদের স্কুল ব্যাগ ও বইয়ের পরিবর্তে মা-বাবারা তুলে দিচ্ছে দ্বিগুন বয়সী স্বামীর হাতে। যারা যত সামান্য যৌতুক নিয়ে সাময়িক সুখের সংসারের মুখ দেখালেও এক-দুটো বাচ্চার মা হলেই সংসারে নামছে অশান্তি কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। সরকার বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ সর্ম্পকে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় মাধ্যমে কুফলগুলো তুলে ধরলেও সে দিকে কর্ণপাত করছে না অভিভাবক মহল।

 

এরি মাঝে গত সপ্তাহে পানছড়ি সদর ইউপিতেই ঘটেছে কয়েকটি বাল্য বিবাহের ঘটনা। রং-বেরংঙের বাতি দিয়ে বানানো গেইট, গোলাপের লাল পাপড়ি দিয়ে ছাপা বিয়ের কার্ড ও সানাইয়ের সুরে সুরেই সম্পন্ন হয়েছে এসব বাল্য বিবাহের কার্যাদি। পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা ছাত্রী আঁখি, মরিয়ম পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সালমারা কিছুদিন আগেও বান্ধবীদের সাথে স্কুল-মাদ্রাসায় ক্লাশ করেছে এমনকি তাদের শখও ছিল লেখা-পড়া শিখবে। কিন্তু বাল্য বিবাহের গ্যাড়াকলে পড়ে আজ তারা শ্বশুর বাড়িতে হান্ডি-পাতিল নিয়েই কাটাচ্ছে ব্যস্ত সময়।

এর আগে পানছড়ি সদর ইউপির কানালাল এলাকার রহিম হুজুরের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে, কলাবাগানের নুরুনব্বীর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া, পানছড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী পুরাতন ব্রীক ফিল্ড এলাকার আবুল কাসেমের মেয়ে, পানছড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী নাছিমা, ফাতেমারা বৌ সেজে গিয়েছে শ্বশুর বাড়ি। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, এদের কেউ কেউ আবার মা’ও হয়েছে।

এলাকার সুশীল সমাজের কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এলাকার আনাড়ী মার্কা নিকাহ রেজিষ্টার কাজীরাও পথ চেয়ে বসে থাকে কখন আসবে বিয়ের ডাক। কাজীদের মধ্যেও নেই মায়া-মহব্বত হাতে টাকা গেলেই বিয়ে পড়াতে আর বয়সের ধার ধারেনা। তাছাড়া এলাকার কাজীরাও বহুরুপী। তারা বেশীরভাগ বিয়েতে পাঠায় প্রতিনিধি, আর কোন দোষ হলেই ফতুয়া দেয় নতুন মানুষ কিছু বুঝে নাই এবারের মত ক্ষমার চোখে দেখেন। এভাবে ক্ষমার চোখে দেখতে দেখতে একেক কাজী হয়েছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। তাছাড়া বাল্য বিবাহ সম্পর্কে নিকাহ রেজিষ্টারদের বিবাহের আগে জানিয়ে দেয়া হলেও তারা সেসব দিকে কর্ণপাত না করে গোপনে টাকার বিনিময়ে চালাচ্ছে এসব অপকর্মের রমরমা ব্যবসা।

এসব বাল্য বিবাহের ঘটনায় আতংকে ভুগছে কোমলমতি ছাত্রীরা। তাদের ধারনা লেখা-পড়া করে কি লাভ কখন যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। শুধু এরাই নয় পুরো পানছড়িতেই ছড়িয়ে পড়েছে বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহের প্রবনতা। বাল্য বিবাহের অঘটনের দীর্ঘ দিনের নায়ক নিকাহ রেজিষ্টার কাজীদের পরিবর্তন করে মেধাবী এবং মানসম্পন্ন কাজী নিয়োগ দিলে কিছুটা হলেও বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে ধারনা করছেন অভিজ্ঞ মহল।

আবার কেউ কেউ বলছে দীর্ঘ দিন পানছড়িতে প্রশাসনিক প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় অভিভাবক ও নিকাহ রেজিষ্টাররা সেই সুযোগ পুরো কাজে লাগিয়েছে। সদ্য যোগ দেয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যদি কঠোর হস্তক্ষেপ নেয় তাহলে কোমলমতি শিশুরা যেমনি বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে তেমনি অঘটনের নায়ক নিকাহ রেজিষ্টারদেরও আইনের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করছেন।

Exit mobile version