পানছড়ির এক সংগ্রামী মায়ের নাম জরিনা
ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন, মেয়ে তাসলিমা ও মুনি আক্তারকে নিয়েই জরিনার সাজানো সংসার। জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি, মাটি কাটা ও পরের বাড়িতে কাজের আয়েই তাদের চুলোয় জ্বলে আগুন।
ছেলে-মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চিন্তা করে দিশেহারা জরিনা “গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণা-বেক্ষণ” (আরইআরএমপি)’র প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করতো। ঝড়-বৃষ্টি ও অসুখ-বিসুখ উপেক্ষা করেও মাথায় গোমটা, কাঁধে কোদাল ও গামছায় মোড়ানো লংকা আর পেঁয়াজ পান্তা হাতেই সাত সকালেই রেবিয়ে পড়তো মাটি কাটার কাজে। বেলা দুইটায় কাজ শেষে ঘরে ফিরেই আবার চুলোর সাথে যুদ্ধ ছিল জরিনার নিত্য রুটিন।
এভাবেই ছেলে-মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিল সংগ্রামী “মা” জরিনা বেগম। বর্তমান দৈনিক ১৫০ টাকা বেতনের সেই কাজটুকুও আর নেই।
জরিনা উপজেলার ৩নং পানছড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর গ্রামের খর্বকায় প্রতিবন্ধী মো. আবু তাহেরের সহধর্মীনি। স্বামী খর্বকায় প্রতিবন্ধী হলেও অলসতা নেই যখন যা পায় করে বেড়ায়।
এরই মাঝে ছেলে-মেয়েরাও বড় হয়েছে বেড়েছে সংসারের খরচ। ছেলে আনোয়ার ৫ম ও অষ্টম শ্রেণীতে টেলেন্টপুল বৃত্তি, এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ ও এইচএসসি পরীক্ষায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ফিন্যান্স বিভাগে ফাইনাল বর্ষে অধ্যয়ন করছে।
মনি আক্তার খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও তাসলিমা খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এবার দিবে এইচএসসি পরীক্ষা।
মায়ের ঘাম ঝরা কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে পড়ে আনোয়ার। মা দিবসের অনুভুতি জানতে চাইলে সে জানায়, মাকে ভালোবাসতে কেবল একটা দিন যথেষ্ট নয় বরং জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত হউক মা-ময়। মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সে দেশের প্রথম সারির কর্মকর্তা হয়ে দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চায়।
জরিনা জানায়, কোন দিবস সম্পর্কে আমার জানা নাই। তবে প্রতিটি মুহুর্তই মা ডাকটি শুনে আমি তৃপ্তি পাই। আনোয়ার নিজে প্রাইভেট পড়ে ও পড়ায়। দু’বোনের সকল খরচাদির ভার তার উপরেই। কিছুদিন আগে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার জন্য জরিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন দশ হাজার টাকা। জরিনা আমাদের বর্তমান সমাজের জন্য একটি বিরল দৃষ্টান্ত বলে জানালেন ইউপি সদস্য মো. মতিউর রহমান।