parbattanews

পানছড়ির এক সংগ্রামী “মা” জরিনার জীবন সংগ্রামের কাহিনী

Anower ma

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

ছেলে মো: আনোয়ার হোসেন, মেয়ে তাসলিমা ও মুন্নি আক্তারকে নিয়েই জরিনার সাজানো সংসার। জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি, মাটি কাটা ও পরের বাড়িতে কাজের আয়েই তাদের চুলোয় জ্বলে আগুন । ছেলে-মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চিন্তা করে দিশেহারা জরিনা “গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাক্ষণ” (আরইআরএমপি)’র প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেয়।

প্রতিদিন ১৫০ টাকার বেতনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘাম ঝরানো শ্রমে মাটি কাটাতেই ব্যস্ত জরিনা। কাজে হাজির না থাকলে বেতন কাটা। তাই ঝড়-বৃষ্টি ও অসুখ-বিসুখ উপেক্ষা করেও মাথায় ঘোমটা, কাঁধে কোদাল ও গামছায় মোড়ানো লংকা, পেয়াজ আর পান্তা হাতেই সাত সকালেই বেরিয়ে পড়ে মাটি কাটার সংগ্রামে। বেলা দুইটায় কাজ শেষে ঘরে ফিরেই আবার চুলোর সাথে সংগ্রাম করা জরিনার নিত্য রুটিন। এভাবেই ছেলে-মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চিন্তা করে দিনের পর দিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সংগ্রামী “মা” জরিনা বেগম।

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ৩নং পানছড়ি ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর গ্রামের খর্বকায় প্রতিবন্ধী মো: আবু তাহেরের স্ত্রী জরিনা বেগম (৩৮)। স্বামী খর্বকায় প্রতিবন্ধী হলেও অলসতা নেই। যখন যা পায় করে বেড়ায়। এরই মাঝে ছেলে-মেয়েরাও বড় হয়েছে বেড়েছে সংসারের খরচ। ছেলে আনোয়ার ৫ম ও অষ্টম শ্রেণীতে টেলেন্টপুল বৃত্তি, এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ ও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৮০তম হয়ে মেধায় এক অনন্য মেধার দৃষ্টান্ত গড়েছে সংগ্রামী এই মায়ের ছেলে। তাই মায়ের চোখেও ঘুম নেই ছেলে ঢাকা পড়বে, অনেক টাকার দরকার। তাছাড়া মেয়ে মনি আক্তার পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার দিবে এসএসসি ও তাসলিমা দিচ্ছে জেএসসি। ভাইয়ের মতো তারা দু’বোনও মেধাবী।

উপজেলার তালুকদারপাড়া ব্রীজ এলাকায় মাটি কাটায় ব্যস্ত জরিনার সাথে আলাপকালে জানায়, ছেলে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এটাই আমার বড় আনন্দ। ছেলের কথা চিন্তা করে কাজে আনন্দ পায় বলে জানায় জরিনা। ছেলে আনোয়ারের লেখা-পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যত শক্ত কাজই হোক কেন আমাকে সংগ্রাম করতেই হবে। তাদের লেখা-পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করার শক্তি পেতে সবার দোয়া চেয়েছেন। কার সাথে মাটি কাটার কাজের সহকর্মীরাও সাহস যোগাচ্ছেন জরিনাকে। সহকর্মী কয়েকজন জানান, আমাদের মাটি কাটার শ্রমিক আমাদের জরিনা আপার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটা আমাদেরও গর্ব। জরিনা মাঝে মধ্যে কাজে না আসলেও তারা নিজেদের উদ্যেগে কাজ করে ছেলের পড়া-লেখা সহযোগিতার যোগান দিবে বলেও এ প্রতিবেদককে জানান।

Exit mobile version