parbattanews

পানছড়ির এসএসসি পরীক্ষার্থী ধ্রুব সাহার মৃত্যু ও কিছু কথা

drubo

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রায় মাসখানেক আগের কথা। পানছড়ি আদি ত্রিপুরা পাড়ার ধনমানিক বড়ুয়া (৭০) নিজের শারীরিক অবস্থা সতেজ রাখতে সাত সকালে বেরিয়ে ছিলেন প্রাত: ভ্রমনে। পাকা সড়ক ছেড়ে কাঁচা পথেই তিনি প্রতিদিন হেঁটে বেড়াতেন প্রায় মাইল দু’য়েক। কিন্তু বেপরোয়া মাহেন্দ্র প্রধান সড়ক ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় গিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরে থেতলে দেয় ধনমানিক বড়ুয়ার পুরো মাথা। পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে সুদুর চট্টগ্রাম নেয়ার পর তার মৃত্যু ঘটে।

এদিকে কিছুদিন আগে নালকাটা তুলাগাছ এলাকায় বেপরোয়া মাহেন্দ্রর ধাক্কায় পানছড়ি তালুকদারপাড়ার সুকুমার সাহার পায়ের দু’টি আঙ্গুল পা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চট্টগ্রাম হাসপাতালে দীর্ঘ দু’মাস চিকিৎসাধীন থেকে সামান্য সুস্থ হওয়ার আগেই আবারও মাহেন্দ্রর থাবায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সুকুমার সাহার বাবা পার্থ সাহা, মা জোস্না সাহা ও তার এক আপন ভাগিনা।

একই ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ধ্রুব সাহা (১৫)। তবে ধ্রুব সাহার মৃত্যু নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে আজো বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

দূর্ঘটনাস্থল থেকে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর জরুরী বিভাগে দেখা মিলে মাত্র একজন ডাক্তারের। এ সময় গুরুতর আহত রোগীর সংখ্যা ছিল সাত। ধ্রুব সাহার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাই অনেকেই চিৎকার করে বলছিল অক্সিজেন দিন ওকে অক্সিজেন দিন। কেউ কেউ বলছিল এস্বুলেন্স দিন আমরা ওকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাব। কিন্তু কে শোনে কার কথা। না পেলো অক্সিজেন, না পেলো এম্বুলেন্স অসহায় হয়ে লেগুনা ও সিএনজি ভাড়া করেই রোগীদের নেয়া হয় খাগড়াছড়ি। সময়মত অক্সিজেন ও এম্বুলেন্স পেলে ধ্রুব’র আলো এত তাড়াতাড়ি নিভত না বলে সবার ধারণা।

এদিকে স্বাস্থ্য সেবায় পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বিভাগীয় দ্বিতীয় সেরার পুরস্কার জনমনে যেন হাঁসির খোরাক। দীর্ঘ ৭/৮ আট বছর যাবৎ বিকল এক্সরে মেশিন, কাজ না করেই সাড়ে চার লক্ষ টাকা হরিলুট, সন্ধ্যা না হতেই পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ভুতুড়ে অন্ধকার, একদিন কর্মস্থলে না থেকেই প্রায় দেড় বছর ধরে পানছড়ি কর্মস্থল থেকে বেতন ভোগ করেছে ডা. শরিফ গাউছুল আকবর (বর্তমানে ডেপুটেশনে খাগড়াছড়ি আছে), উপজেলা পরিষদ থেকে বিশালাকার মোটর পাওয়া সত্বেও হাসপাতাল ও স্টাফ কোয়ার্টারে সারাবছর পানির হা-হা কার, পালাবদল করে কর্মস্থল ত্যাগ ইত্যাদি তদন্ত না করে, জনজরিপ না করে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বিভাগীয় দ্বিতীয় সেরার পুরস্কার দেয়াটা হাস্যকর বলেও মনে করছেন অনেকে। তবে এম.ও ডা. বিদুর্ষী চাকমা, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শফিকুল ইসলাম ও শ্যামল চাকমার উপস্থিতি ও সেবার মানেই টিকে রয়েছে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

অপরদিকে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন মাহেন্দ্র চালকের কারণে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে দূর্ঘটনা। বিশেষ করে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়েই নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কেউ যাচ্ছে লোকালয়ে, কেউবা ধাক্কা খাচ্ছে গাছের সাথে কেউবা উল্টে পড়ছে খাঁদে। এসবের প্রতিকার চেয়ে ও ধ্রুব সাহার অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছে পানছড়ি বাজার দেবালয় পরিচালনা কমিটি, পানছড়ি সনাতন ছাত্র যুব পরিষদ ও পানছড়ির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাদের দাবি নিরাপদ সড়ক ও স্বাস্থ্য সেবার মান যদি ভালো হয় তাহলে আমাদের সহপাঠী ধ্রুবকে এত তাড়াতাড়ি হারাতাম না।

Exit mobile version