parbattanews

পানছড়ির ঝুল ঝাড়ু: জেলা পেরিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে সারাদেশ

JARU PIC

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

বিধাতা ঐশ্বরিক হাতের ছোঁয়ায় যেন সাজিয়েছেন বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো। সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলায় প্রাকৃতিক সম্পদসহ ফলজ ও বনজ সম্পদে ভরে দিয়েছেন এ দেশের পার্বত্য জেলাগুলো। যার মধ্যে একটি জনপদের নাম পানছড়ি উপজেলা। এক সময় এ এলাকা ছিল পানের বরজে ভরপুর। পানছড়ির উৎপাদিত পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে নদীপথে জেলা এমনকি বড় বড় শহরগুলোতেও রপ্তানি করা হতো। এতে সরকারী রাজস্বের পাশাপাশি এলাকার কৃষকেরাও হতো লাভবান। ফলে বিশেষজ্ঞরা এই এলাকার নাম দেন পানছড়ি।

গত কয়েক বছর যাবত পানছড়ির বিভিন্ন বাজারগুলোতে পানের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে ঝুল ঝাড়ু। চেংগী নদীর বুক চিরে সাঁপের মতো এঁকে-বেঁকে যাওয়া উঁচু-নিচু প্রত্যন্ত রাস্তাগুলো বেয়ে মাথায় করে সারি সারিভাবে এই ঝুল-ঝাড়ু বাজারে নিয়ে আসে উপজাতীয় সংগ্রহকারীরা। জানা যায়, এ জন্য তারা বছরের শুরুতে আড়তদার থেকে দাদনও নিয়ে যায়। গহীন জঙ্গলের টিলা টংঙ্কর ও বিভিন্ন খালের দু’পার্শ্বে কাঁশফুলের মতো থোকায় থোকায় ঝুল ঝাড়ুর ফুল বনের সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার দৃশ্যও সরেজমিনে দেখা যায়। যা দেখতে নান্দনিক, নয়নাভিরাম ও মনোমুগ্ধকর। ফুলগুলো সবুজ বর্ণ থেকে হালকা হলদে হলেই কাটার উপযোগী হয় বলে সংগ্রহকারীরা জানান।

কথা হয় পানছড়ি লোগাং বাজার এলাকার ঝুল ঝাড়ুর আড়তদার আবদুল খালেকের সাথে। তিনি জানালেন দীর্ঘ বৎসর যাবত এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এ ব্যবসা করে তিনি মোটামুটি লাভবান হয়েছেন বলে জানান। পানছড়ির লোগাং বাজার এলাকায় তার ঝাড়ুর মাঠ। মাঠের বুকে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার ঝাড়ুর আঁটি। ঝাড়ু পরিষ্কার, আটি বাঁধাই ও রোদে শুকানোর কাজে নিয়োজিত আছেন কয়েকজন। এদের দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন আবদুল খালেক নিজেই। কয়েকজন জানালেন মাসিক বেতন হিসাবে ঝাড়ুর মাঠে দুই/তিন মাস ধরে কাজ করেন। আবদুল খালেক এ প্রতিবেদককে জানান, এবার ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। এ ব্যাপারে পানছড়ির রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রুম (ফুলের আটি) পানছড়ি থেকে সমতলে যাওয়ার অনুমতি সরকারী ভাবে পায়। যা থেকে সরকারী রাজস্ব আদায় হয়ে সরকারও লাভবান হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এক ট্রাকে লোড করা হয়্ পঁয়ত্রিশ হাজার ব্রুম।

স্থানীয় কৃষককুল জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে অনেকে ঝাড়ু কাটার সময় শিকড়সহ উপড়ে ফেলে। পাশাপাশি জুমের আগুনে পুড়ে অনেক শিকড় নির্মূল হয়ে যায়। যার ফলে এই ঝুল-ঝাড়ুর ফলন দিন দিন কমে আসছে। সরকারীভাবে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলে সংগ্রহকারী ও আড়তদারের পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব আদায় করে লাভবান হবে বলে ধারনা করছেন অভিজ্ঞ মহল।

Exit mobile version